হুটহাট ফরোয়ার্ডে সাবধান, জেল আছে পিছে!


• পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগে সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের ছেলে রাসেল আজ়িজ়কে ঘিরে এখন গোয়েন্দা পুলিশের টানাটানি চলছে।

• ভিন্‌ধর্মীরা দুর্ঘটনায় জখম এক ধর্মপ্রচারকের উপরে হামলা চালায় বলে সম্প্রতি ভুয়ো খবর প্রচারের অভিযোগ উঠেছিল। পরিণামে একটি ওয়েবসাইটের সম্পাদককে গ্রেফতার করেছিল বেঙ্গালুরু পুলিশ।

• এ রাজ্যেও অশান্তি বাধানোর মতলবে ভুয়ো ছবি পোস্ট করার অভিযোগে গত বছর একটি রাজনৈতিক দলের আইটি সেলের নেতার কোমরে দড়ি পড়েছিল।

কুমতলবে ভুয়ো খবর ছড়ানো তো বটেই, আলটপকা খবর নেটমাধ্যমে 'ফরোয়ার্ড' করার বিপজ্জনক দিক নিয়ে আলোচনা চলছে আইনজ্ঞদের মধ্যে। এক সাংবাদিক তথা নেতার একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে মামলায় মাদ্রাজ হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়েও নেটে দায়িত্বজ্ঞানহীন 'পোস্ট ফরোয়ার্ড' করার প্রবণতার বিপদের কথা বলা হয়েছে।

সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ''কে কোন খবর বা ছবি ফন্দি এঁটে তৈরি করল আর কে তা প্রচার করল, আইন সেই কচকচি বোঝে না। লোকে যেটা বিশ্বাস করে, সেটাই সাধারণত প্রচার করে থাকে।'' গত বছরই পশ্চিম মেদিনীপুরের এক যুবক উৎসবের সময়ে অশান্তি বাধাতে উল্টোপাল্টা পোস্ট শেয়ার করছিলেন। হঠাৎ আঙুল পড়ে পোস্টটা 'ফরোয়ার্ড'টা হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি, কিন্তু তখনই জামিন পাননি। বিভাসবাবুর কথায়, ''সাইবার আইন ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী গোলমাল বাধানোর মতলবে খবর ছড়ালে তিন বছরের জেল হতে পারে। কোনও মহিলার আপত্তিকর ছবি পেয়ে নেটে ছড়ানোর জেরে কেউ অভিযোগ তুললেও বিপদ হতে পারে।''

নির্দোষ কার্টুন শেয়ার করে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের ভোগান্তির কাহিনি এখনও জনস্মৃতিতে টাটকা। ''বাক্‌স্বাধীনতা আর বাক্‌স্বাধীনতার অপপ্রয়োগ নিয়ে পুরনো বিতর্কও এই আলোচনাতেই ঢুকে পড়ছে,'' বলছেন বিভাসবাবু।

মাদ্রাজ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট রায় নিয়ে কিছু বলতে চাননি সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তবে তিনিও বলছেন, ''কারও নামে কেউ ভুয়ো প্রচার করলে বা মেয়েদের আপত্তিকর ছবি ছড়ালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।'' আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ঠিক একমত নন। তাঁর মত, ''কেউ কিছু একটা পোস্ট করে ফেললেই তাঁকে ধরতে হবে, এটা ঠিক নয়। আগে ডেকে কথা বলা উচিত।''

দেশ জুড়ে ভুয়ো খবর জরিপে নিযুক্ত অল্টনিউজ সংস্থার কর্ণধার প্রতীক সিংহ বিষয়টা দেখতে চান অন্য ভাবে। তিনি বলেন, ''স্রেফ আইনি সমাধানে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে না।'' যে-কোনও মানুষই যে ভুয়ো খবরের চক্রীদের পাল্লায় পড়ে বোকা বনে যেতে পারেন, এটা মনে করিয়ে প্রতীকবাবু বলছেন, ''দুমদাম ফরোয়ার্ড করার বিপজ্জনক পরিণতি সম্পর্কে লোকজনকে সচেতন করা উচিত। কথায় কথায় গ্রেফতার, গণতন্ত্রের পক্ষেও ভাল নয়।''