‘আত্মহত্যা’ বলেও দুলালের মৃত্যুতে কেন খুনের মামলা রুজু করল সিআইডি?


ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখিয়ে পুলিশ যাকে প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলেছিল, এখন সেই ঘটনাতেই খুন-অপহরণের মামলা শুরু করার নির্দেশ দিল সিআইডি।

ডাভা গ্রামের হাইটেনশন টাওয়ার থেকে গত ২ জুন ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের। দেহ মেলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পুরুলিয়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্ত মোতাবেক সেটি আদতে আত্মহত্যার ঘটনা। তার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বদলি হন জয়। পুরুলিয়ার দায়িত্ব নিয়ে নতুন পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়াও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখিয়ে বলেছিলেন, দুলাল কুমারের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যাই। সেই 'আত্মহত্যার' তদন্তে নেমে বলরামপুর থানার পুলিশই গত ২১ জুন খুন ও অপহরণের মামলা দায়ের করেছে। যদিও এই মামলায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

দুলালের আত্মহত্যার 'কাহিনী' কী ভাবে খুনের ঘটনায় পরিণত হল?

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ  মাঘারিয়া বৃহস্পতিবার বলেন, প্রাথমিক তদন্তের ভার নিয়েছিল সিআইডি। সিআইডি আমাদের খুনের মামলা করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সেই কারণেই নতুন করে মামলা শুরু করা হয়েছে।''

সিআইডি কেন সরকার ঘোষিত 'আত্মহত্যা'র ঘটনার জন্য এখন খুনের তদন্ত শুরু করতে বলছে? তদন্তকারী সংস্থার বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার মানিকলাল কার্ফা ২১ জুন বলরামপুর থানার ওসিকে চিঠি লিখে জানান, ''যা নির্দেশ পেয়েছি সেই প্রেক্ষিতে দুলাল কুমারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কৃষ্ণপদ কুমারের অভিযোগটি পাঠাচ্ছি। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি।''

কৃষ্ণপদ কুমার মৃত দুলালের ভাই। গত ৩ জুন বলরামপুর থানায় তিনিই দুলালকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ প্রাথমিক ভাবে তা গ্রাহ্য করেনি। সিআইডি সূত্রের খবর, ঘটনার তদন্তে নেমে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ মেনে দুলাল কুমারের ময়না-তদন্ত করা হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। দেহের সুরতহাল করার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সিআইডির অন্দরেই। ভিসেরা রিপোর্ট আসার আগেই সুরতহালের পর্যবেক্ষণের উপর ভরসা করে কেন পুলিশ আগাম আত্মহত্যার কথা জানিয়েছিল, তা নিয়েও ধন্ধ রয়েছে। এক সিআইডি কর্তা জানান, দুলালের মোবাইল ফোনটি থেকেও এই হত্যা রহস্যের সূত্র মিলতে পারে।  দুলালের দেহ উদ্ধারের পর পুলিশ তা নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। পুলিশের একাংশের ধারণা, সিবিআই তদন্ত চেয়ে দুলালের পরিবার হাইকোর্টে গিয়েছে। আদালত যদি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, তা হলে সরকারের মুখ পুড়তে পারে। তাই দুলালের ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত এগোনো ঠিক হবে বলে মত পুলিশের একাংশের। তবে এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। ৩০ মে একই ভাবে বলরামপুর থানায়  ত্রিলোচন মাহাতোর দেহ মিলেছিল। সেই খুনে পাঞ্জাবি মাহাতো নামে এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। ত্রিলোচনের আইনজীবী বলেন,''মূল অভিযুক্তদের ধরেনি পুলিশ। ধৃতের সঙ্গে মৃতের গোলমাল ছিল না।''