পথের ধারে পুরুষদের পাশেই ‘শৌচকর্ম’ তরুণীর! তবুও তাঁকে কুর্নিশ সকলের


অঙ্কিতা সেনগুপ্ত।

বালিগঞ্জ স্টেশনের ধারে শৌচকর্ম করছিলেন কয়েকজন পুরুষ। আচমকাই তাঁদের মধ্যে গিয়ে উপস্থিত এক তরুণী। অন্যদের বিস্মিত করে তিনিও শৌচকর্ম করার ভঙ্গিতে বসে পড়লেন রেললাইনের ধারেই!

বিস্মিত জনতা ভিড় জমালেন তাঁকে ঘিরে। উড়ে এল কটূক্তিও। উঠে দাঁড়িয়ে ওই তরুণী বললেন, ''একবার ভেবে দেখুন, শৌচালয় না থাকলে মেয়েদের কতটা সমস্যা হয়! আপনারা রাস্তার ধারেই শৌচকর্ম করতে পারেন, কিন্তু সামাজিক বৈষম্যের বেড়াজালে আমাদের সে সুযোগও নেই।'' তাঁর কথায় এবার
মিলল সমর্থন।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত অঙ্কিতা সেনগুপ্ত নামের ওই তরুণী গত বছরখানেক ধরে গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ এলাকায় মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচালয় তৈরির দাবিতে লড়াই চালাচ্ছেন। ফুটপাথবাসী মহিলাদের সমস্যার গভীরতা বুঝতে একাধিক রাত তাঁদ‌ের সঙ্গে গড়িয়াহাট উড়ালপুলের নীচে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ''এই সমস্যা যে কতটা গভীর, তা ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। অধিকাংশ জায়গাতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে 'সুলভ' নেই। যেগুলি রয়েছে, রাত একটু গড়ালেই বন্ধ হয়ে যায়। পুরুষেরা রাস্তা বা রেললাইনের ধারে শৌচকর্ম করে নিতে পারেন। কিন্তু মহিলাদের সে সুযোগ নেই। এই অবস্থাটা বদলাতেই লড়ছি। এ জন্য পুরুষদের সমর্থনও জরুরি।''

সম্প্রতি বালিগঞ্জ স্টেশনের ধারে তাঁর ওই 'কাজ' সম্পর্কে অঙ্কিতার ব্যাখ্যা, ''মনে হয়েছিল, সাড়া পেতে ধাক্কা দেওয়া প্রয়োজন।'' প্রকাশ্যে এমন করতে সমস্যা হয়নি? অঙ্কিতার উত্তর, ''প্রাথমিক অস্বস্তি ছিলই। কিন্তু যে জন্য করছি, সেটার গুরুত্ব তো অনেক বেশি।'' ইতিমধ্যেই পুরসভা এবং রেল কর্তৃপক্ষের দারস্থ হয়েছেন তিনি। বললেন, ''আশ্বাস মিলেছে। আশা করি দ্রুত তা বাস্তবায়িত হবে।'' পুরসভার এক আধিকারিক এদিন বলেন, ''মহিলাদের অসুবিধা বাস্তব সত্য। কিন্তু সমস্যা হল, 'সুলভ'গুলি রাত ক'টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, সে সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।'' অঙ্কিতা যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, তার কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ''ওর জন্য আমরা গর্বিত।''