চোখের জল মুছতে মুছতেই মেয়েকে শেকলে বাঁধেন মা! দেখুন ভিডিও

মা কণিকা বিশ্বাসের সঙ্গে মেয়ে প্রিয়া বিশ্বাস।


মেয়েকে কেন এইভাবে বেঁধে রেখেছেন প্রশ্ন করতেই মায়ের চোখ জলে ভরে গেল। এই তো সেদিনের কথা যখন সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত কত সাবলীল ভাবে মায়ের সঙ্গে কথা বলত সে, পড়তে বসত, মায়ের কাছে আবদার করত, খেতে চাইত। কিন্তু হঠাৎ মেয়েটি তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে।


রাক্ষস খোক্কসদের কাহিনীতে এরকম কখনও-সখনও শোনা যায়, তাও হয়তো না। বাস্তবেও যে এমনটা হতে পারে তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। কোনো মেয়েকে তার মা হাত-পা শেকলে বেঁধে রাখতে পারেন, তা ভাবনাতীত। কিন্তু মালদা শহরের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেখা গিয়েছে এরকম একটি ঘটনা।
 
মেয়ে আপন মনে গান গেয়ে চলেছে। কোনও বন্য পশুকে যেভাবে বেঁধে রাখা হয়, সেভাবে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। তবে মেয়ের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে আপন মনে গান গেয়ে চলেছে। আর তার মা যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায় চলেছে সেদিকে।

মেয়েকে কেন এইভাবে বেঁধে রেখেছেন প্রশ্ন করতেই মায়ের চোখ জলে ভরে গেল। এই তো সেদিনের কথা যখন সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত কত সাবলীল ভাবে মায়ের সঙ্গে কথা বলত সে, পড়তে বসত, মায়ের কাছে আবদার করত, খেতে চাইত। কিন্তু হঠাৎ মেয়েটি তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। তারপরেই সাধারণ মানুষের জবানিতে 'পাগল' হয়ে যায়। তারপর থেকে আজও একই ভাবে চলছে তাদের দুর্দশাময় জীবন।

পুরাতন মালদার মুচিয়া অঞ্চলের মোহনবাগান গ্রামের খানপুর এলাকায় বসবাস কনিকা বিশ্বাসের। স্বামী, স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বেশ সুখের সংসার ছিল কনিকা দেবীর। স্বামীর মারা যান মেয়ে ছোট থাকতেই। তারপর থেকেই ছন্দপতন হয় তাঁদের পরিবারে।
সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে কনিকার কাঁধে। পরিচারিকার কাজ করার পাশাপাশি ছেলেমেয়ের শিক্ষার ভার একাই নিয়েছিলেন। ছেলে বিদ্যুৎ বিশ্বাস বড় ও মেয়ে প্রিয়া বিশ্বাস ছোট। মায়ের কষ্ট দেখে ছেলে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে যোগ দেয়। এদিকে মেয়ে প্রিয়া সপ্তম শ্রেণির পড়া শেষ করতেই আচমকা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে।

কান্নায় চোখ মুচছেন মা। নিজস্ব চিত্র।
তারপর থেকে তার মা বাড়ি থেকে বেরনোর সময়েই প্রিয়ার হাতে ও পায়ে শেকল দিয়ে হাত পা বেঁধে রাখা শুরু করে, নাহলে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে চলে যায় সে। আর তাকে খুঁজতে খুঁজতে মায়ের ভোগান্তি  বাড়ে। পাশাপাশি প্রিয়ার মনের মতো কিছু না হলে গ্রামবাসীদের মারধরও করে সে। তাই অগত্যা কষ্ট হলেও শিকলে বেঁধে রাখতে হয় প্রিয়াকে।

বিষয়টি এলাকাবাসীরাই বিধায়কের নজরে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক স্তরে তাকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আরও ভাল চিকিৎসার জন্য তাকে বহরমপুর নিয়ে যেতে হবে বলে জানান চিকিৎসকেরা। তবে মায়ের আশা মেয়ে আবার সুস্থ হয়ে তাঁর কাছে ফিরে আসবে।