আষাঢ়ে তাপপ্রবাহ! স্কুলগুলিতে বাড়তি ছুটি ঘোষণা সরকারের


গরমের ছুটি শেষে স্কুল খুলেছে কয়েক দিন আগেই। পাঁজিতে আষাঢ় এবং খাতায়-কলমে বর্ষাও হাজির। তা সত্ত্বেও আবার 'গ্রীষ্মের ছুটি' ঘোষণা করতে হল রাজ্য সরকারকে।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবার জানান, কাল, বুধবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারি, সরকারি সাহায্যপুষ্ট স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি স্কুলগুলিকেও এই বাড়তি ছুটি দিতে অনুরোধ করেছেন তিনি। ''প্রবল তাপপ্রবাহ চলছে। পড়ুয়াদের স্কুলে যেতে সমস্যা হচ্ছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি থেকে ফেরার পরে তাঁর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,'' বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে এই বাড়তি ছুটির ফলে যে-সব ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না, সেগুলো পরে যাতে পুষিয়ে দেওয়া হয়, সে-দিকে নজর রাখতে বলেছেন পার্থবাবু।
আরও পড়ুন: ব্যাগ বহাল প্রাথমিকে
কলকাতায় এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে সাত ডিগ্রি বেশি। এটাই এক দশকের নিরিখে জুনে মহানগরীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। হাওয়া অফিসের পরিভাষায় গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলেই সেটাকে বলা হয় তাপপ্রবাহ। এ বার চৈত্র-বৈশাখেও রাজ্যে তাপপ্রবাহ বইতে দেখা যায়নি। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার মতো শুখা জেলাতেও গ্রীষ্মের সেই দাপট ছিল না। কিন্তু এখন জেলাগুলিতেও পারদ ঊর্ধ্বমুখী। গরমের এই দাপট চলবে বলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস।

কয়েক বছর আগেও এক বার গরমের ছুটি দীর্ঘায়িত হয়েছিল। কিন্তু তখন ক্যালেন্ডারে ছিল গ্রীষ্মকাল। অর্থাৎ পঞ্জিকার কাল-বিভাজন অনুযায়ী দহন-দাপট ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এ বার বর্ষায় তাপপ্রবাহ কেন? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''বর্ষা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। সাগর থেকে পুবালি হাওয়ার বদলে উত্তর ও মধ্য ভারত থেকে গরম হাওয়া ঠেলে ঢুকছে গাঙ্গেয় বঙ্গে। তাই এই দশা।'' যদিও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা সমাগমের ঘোষণা নিয়েই সন্দিহান অনেকে। ''বর্ষা আদৌ গাঙ্গেয় বঙ্গে এসেছে কি,'' প্রশ্ন আবহবিজ্ঞানী সুতপা চৌধুরীর।

প্রশ্ন উঠেছে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস নিয়েও। তারা বলছে এক, হচ্ছে আর এক! আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিল, রবিবার কলকাতায় তাপপ্রবাহ বইবে, তাপমাত্রা ছোঁবে ৪০ ডিগ্রি। কিন্তু মেঘবৃষ্টিতে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রিও ছোঁয়নি। সোমবার আর্দ্র ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া চলবে বলে জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, দিনের তাপমাত্রায় বড় ধরনের বদল হবে না। কিন্তু হল উল্টো! এ দিন সকাল থেকেই গরম হাওয়া (লু) বয়েছে।

আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে নানান রসিকতা চালু ছিল। প্রযুক্তি উন্নত না-হওয়ায় তখন গণনাও নিখুঁত হত না। প্রযুক্তির হাত ধরে গত কয়েক বছরে পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও পূর্বাভাস মিলছে না কেন? পূর্বাভাস পুরো ব্যর্থ, এমন অভিযোগ মানতে রাজি নয় আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রকৃতির দ্রুত মর্জি বদলের ফলে পূর্বাভাস মিলছে না। যেমন রবিবার অক্ষরেখা তৈরি হয়ে হঠাৎ মিলিয়ে গিয়েছে সোমবারেই! আমজনতার প্রশ্ন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস তো স্মার্টফোনের অ্যাপেও পাওয়া যাচ্ছে। তারা প্রকৃতির মর্জি বুঝে ঠিকঠাক পূর্বাভাস দিতে পারলে মৌসম ভবন পারবে না কেন? একটি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারি আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ সোমবারের তাপমাত্রা রেকর্ড গড়তে পারে বলে আঁচ করেছিলেন। কিন্তু পূর্বাভাসে তা প্রতিফলিত হয়নি।