ভেবেচিন্তে গ্রহণ রাখুন বন্ধুত্বের অনুরোধ! সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আর যা বলছে কলকাতা পুলিশ


সুদূর ইংল্যান্ড থেকে এসেছে নানা উপহার। সোনার গয়না, ব্যাগ, নানাবিধ প্রসাধনী। পাঠিয়েছে আপনারই এক বন্ধু, যার সঙ্গে আপনি বন্ধুত্ব পাতিয়েছিলেন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার আর হোয়াটস্যাপে। আপনিও খুশি কাস্টমস থেকে ফোন পেয়ে। উপহারগুলো বিদেশ থেকে এসেছে, তাই কাস্টমস ডিউটি দিয়ে তবেই হাতে পাওয়া যাবে। পাঠিয়েও দিলেন টাকা, একবারও কিছু না ভেবে।চিন্তাও করলেন না একবার, এতগুলো টাকা পাঠানো ঠিক হচ্ছে ?

ঠিক এমনই এক ফাঁদে পা দিয়েছিলেন ৫৩ বছর বয়সের সান্দ্রা। এন্টালি থানা এলাকার বাসিন্দা। স্বামী মারা গেছেন আগেই। একদিন হঠাৎ ইংল্যান্ড নিবাসী জনৈক ড্যানিয়েল স্ট্যানের কাছ থেকে ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এল। প্রোফাইলের ছবি একজন বিদেশির। এরপর শুরু হল হোয়াটস্যাপে চ্যাটিং। হোয়াটস্যাপ নম্বরটিও ইংল্যান্ডের।

'বন্ধুত্ব' ক্রমে গাঢ় হল। একদিন বিদেশি বন্ধুর পাঠানো গয়না, আই ফোন সহ নানা দামি উপহারের সুখবরও জানতে পারলেন সান্দ্রা। কাস্টমস অফিসের নাম করে ফোনও এল। ড্যানিয়েল আগেই বলে রেখেছিল অবশ্য, ২৯০০০ টাকা ডিউটি দিলে তবেই হাতে মিলবে উপহার। সান্দ্রা সানন্দে দিলেন। উপহার কিন্তু হাতে এল না।'ড্যানিয়েল' বোঝাল, নিয়মকানুনের ফাঁসে পড়ে দেরি হচ্ছে, এবং কী আশ্চর্য, সান্দ্রা বিশ্বাস করলেন !

ইতিমধ্যে সম্পর্কের ভিত আরও গভীর হয়েছে। কাস্টমসের ধাঁধার মধ্যেই 'ড্যানিয়েল' তাঁকে আরও উপহার পাঠিয়েছেন এবং সান্দ্রাও ডিউটির টাকা পাঠিয়ে গেছেন।এইসব সরকারি প্যাঁচ কেটে উপহার হাতে আসতে সময় লাগছে, কিন্তু আসবে নিশ্চয়ই, এই বিশ্বাসে।
এর পর যা হওয়ার তাই। সান্দ্রা একদিন আবিষ্কার করলেন, ড্যানিয়েল তার 'ভালবাসা' সমেত উধাও হয়ে গেছে। প্রতারিত হয়ে যতদিনে 'বন্ধুত্বের' আসল স্বরূপ বুঝলেন, ততদিনে সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি টাকা খোওয়া গেছে তাঁর। সেটা গত মে মাসের শুরুর দিক।
সান্দ্রা কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ দায়ের করলেন। প্রত্যাশিতভাবেই দেখা গেল, ফেসবুক প্রোফাইলটি ভুয়ো। হোয়াটসস্যাপও রেজিস্টার করানো হয়েছিল ইংল্যান্ডের একটি নম্বরে। শুরু হল প্রযুক্তি-প্রহরা। এবং দেখা গেল, ড্যানিয়েলের ফোন ও ফেসবুকীয় কার্যকলাপের কেন্দ্র দিল্লির উত্তমনগর এলাকা। টিম রওনা দিল দিল্লি ।

বেশ কয়েকদিন দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশির পর প্রতারণা চক্রের পাণ্ডা 'ড্যানিয়েল' ধরা পড়ল জালে।' আসল নাম দিয়াকিত ইউসুফ। জেরা করে জানা যায় জুড বলে আরেকজনের কথা, যে ইউসুফের কুকর্মের সঙ্গী। ইউসুফ ধরা পড়ার সময় জুড ডেরায় ছিল না। দিল্লি ছেড়ে জুডের পালাবার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কলকাতা পুলিশের হাতে জুড ধরা পড়ল গত ৭ জুন। দিল্লি থেকেই। দু'জনেই নাইজেরীয়।

ডেরা তল্লাশি করে বেশ কিছু দামি মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব, পেন ড্রাইভ সহ আরও নানা জিনিস বাজেয়াপ্ত হয়েছে। একই পদ্ধতিতে আরও অনেক মহিলাকে ঠকিয়েছে এরা। মূলত মধ্যবয়সী মহিলাদেরই টার্গেট করত ইউসুফ আর জুড। একই চিত্রনাট্য অনুযায়ী খেলা শুরু হত ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর মাধ্যমে। তারপর ধীরে ধীরে লোভনীয় উপহারের টোপ ফেলা হত। কখনও দেওয়া হত ব্যবসার শরিক বানানোর মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, কখনও বিয়ের প্রস্তাবও।এরই ফাঁকে ফাঁকে উপহার পাঠানোর নামে 'কাস্টমসের' টাকা আদায় চলত। অলীক মোহে বা সরল বিশ্বাসে অনেকে টাকা পাঠাতেন, এবং যখন ভুল বুঝতে পারতেন, অনেক দেরি হয়ে যেত।