ধর্ষিত রোহিঙ্গা নারীরা সন্তান জন্ম দিতে শুরু করেছেন


এ বছর বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৪৮ হাজার নারী সন্তান জন্ম দিতে পারেন। যাঁদের অধিকাংশই বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। গত ন'মাসে বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে অন্তত ১৬ হাজার রোহিঙ্গা শিশু।সেনা নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে প্রতিদিন ৬০টি করে শিশু জন্ম নিচ্ছে বলে জাতিসংঘের নারী ও শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, গত আগস্টে মিয়ানমারে নির্যাতন শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এ সময়ে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মোট ১৬ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে, যাদের মধ্যে মাত্র ৩ হাজার চিকিত্‍সা সেবার আওতায় এসেছে, জানাচ্ছে ইউনিসেফ।

বাংলাদেশে ইউনিসেফ-এর প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেইগবেদার বলেন, ''প্রতিদিন প্রায় ৬০টি শিশু তাদের বাড়ি থেকে দূরে আতঙ্কজনক এক পরিস্থিতিতে প্রথমবারে মতো শ্বাস নিচ্ছে। আর তাদের বাস্তুচ্যুত মায়েরা সহিংসতার ভীতি ও ধর্ষণের স্মৃতি নিয়ে আছেন।'' তবে তিনি বলেন, ''যৌন নিপীড়ণ বা ধর্ষণের কারণে ঠিক কী পরিমাণ শিশু জন্ম নিচ্ছে তা বলা কঠিন।'' এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা নারীদের খুঁজে বের করতে কাজ করে যাচ্ছেন সেবাকর্মীরা। বিশেষজ্ঞ ও সেবাকর্মীরা বলছেন, লজ্জার কারণে অনেক রোহিঙ্গা নারীই চিকিত্‍সাসেবা নিতে আসেন না। তাঁদের আশঙ্কা, এতে করে অনেক শিশুই জন্মের পর পরিত্যক্ত হতে পারে কিংবা গর্ভপাতের কারণে মা ও শিশু - উভয়েরই মৃত্যু হতে পারে।

সেবাকর্মী তসমিনারা নিজেও একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী। গত কয়েকমাস তিনি পর্দার আড়ালে থাকা ক্যাম্পে ক্যাম্পে তল্লাশি চালিয়ে অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গা নারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। তাঁর কথায়, ''আমরা তাঁদের একটি গোপন কোড বলেছি, যাতে তাঁরা হাসপাতাল কিংবা বা চিকিত্‍সা কেন্দ্রে গিয়ে সেটা বলেন। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা কোড শোনার সাথে সাথে তাঁদেরকে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেবেন।'' ''তাঁরা বেশিরভাগ সময়ই লজ্জা পাচ্ছেন।

আবার এগিয়ে আসতে ভয়ও পাচ্ছেন'', জানান তসমিনারা। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যন্ড্রিউ গিলমার বলেছেন, গত বছরের আগস্টে জুড়ে চলা 'উন্মত্ত যৌন সহিংসতা'-র কারণে শিশু জন্মহারে একটি 'অপ্রতিরোধ্য' বৃদ্ধি আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স-এর মার্সেলা ক্রায় বলছেন, এর ফলে প্রচুর গর্ভধারণের ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৪৮ হাজার নারী সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
যাঁদের অধিকাংশই বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩০০ অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গা নারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গা নারীর প্রকৃত সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো হবে ধারণা। রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা আবুদর রহিম জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ক্যাম্পে থাকা দুই নারীকে চেনেন, যাঁরা মিয়ানমারের সেনাদের ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরেছেন।

তিনি বলেন, ''মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এঁদের ধর্ষণ করেছে। এবং এটাই তাদের অপরাধের প্রমাণ।'' এর আগে নভেম্বর মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৫২ জন রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীর সাক্ষাত্‍কার নিয়েছে তারা। যাঁদের মধ্যে ২৯ জন ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছিলেন। এইচআই/ডিজি (রয়টার্স, এইপিই,আরটিআরই) প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে।