এবার দিঘার সমুদ্রে কোমর জলের বেশি নামলেই গ্রেপ্তার

দিঘা: দিঘা সমুদ্রে দুর্ঘটনা ঠেকাতে বেপোরোয়া পর্যটকদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিল জেলা পুলিশ প্রশাসন। হাঁটু কিংবা কোমরের বেশি জলে নামলেই সমুদ্রপাড়ে কর্মরত নুলিয়ারা মাইকিং করে সতর্ক করবে। মাইকিং এর পরও যদি পর্যটকদের বেপোরোয়া মনোভাব লক্ষ্য করা যায় সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। সমুদ্রে তলিয়ে মৃত্যু ঠেকাতে এমনই কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে জেলা পুলিশ। সেইসঙ্গে মদ্যপান অবস্থায় সমুদ্রে নামলে পর্যটকদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি জরিমানা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। সেইসঙ্গে সমুদ্রপাড়ে নজরদারির জন্যে বাড়ানো হয়েছে পুলিশ ও সিভিক ভলানটিয়ারের সংখ্যা।

গত এক সপ্তাহে ৪ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। তাই দিঘার একাধিক ঘাটে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ বসু জানান, পর্যটকদের সমুদ্রস্নানের উপর নজরদারি বাড়াতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মাইকিং থেকে সাইরেন ব্যবহার করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে বেপোরোয়া মনোভাবাপন্ন পর্যটকদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। দিঘা থানার ওসি বাসুকীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশাল পুলিশ নিয়ে বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকতের সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। তবে সমুদ্র স্নানে কোমরের বেশি জলে নামতে বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে এখনও পর্যন্ত দিঘা থানার পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে, দিঘা মোহনা উপকূল থানার পক্ষ থেকেও ৪ জন পর্যটককে বেপরোয়া ভাবে সমুদ্রে নামা এবং বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা পাকানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও পরে মুচলেকা লিখিয়ে ধৃত পর্যটকদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত দু'মাসে দিঘা সমুদ্র সৈকতে জলে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন পর্যটক। সৈকতে নুলিয়া ও সিভিক ভলানটিয়ারের সংখ্যা বাড়িয়েও মৃত্যুর মিছিল কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। যার মূল কারণ, বিপজ্জনক ঢেউয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার প্রবণতা, বেপরোয়া মনোভাবের জেরে সমুদ্রের অনেক গভীরে নেমে গিয়ে সাঁতার কাটা, আর সব থেকে বিপজ্জনক হল মদ্যপ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে সমুদ্র স্নানে নামা। তাই হাজারও সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও পর্যটকদের মৃত্যুর ঘটনা কিছুতেই ঠেকানো না যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায় পুলিশ কর্তাদের কপালে। এই পরিস্থিতির সামনে মৃত্যুমিছিল ঠেকাতে জেলা পুলিশ এবার কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন থেকে ওল্ড দিঘার বিপজ্জনক ঘাটগুলিতে ১ জন করে পুলিশ অফিসার (এএসআই) নজরদারির দায়িত্বে থাকবেন। তিনি প্রতিনিয়ত ফুট পেট্রোলিং করবেন এক ঘাট থেকে অন্য ঘাট পর্যন্ত। কোনও পর্যটক বেপরোয়া ভাবে সমুদ্রে নামতে চাইলে তাঁকে তৎক্ষণাৎ সমুদ্র থেকে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিযুক্ত হয়েছে বিশাল পরিমাণে নুলিয়া ও সিভিক ভলানটিয়ার। কোনও পর্যটক অবাধ্য হলে তাঁকে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তারেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওল্ড দিঘা থেকে শুরু করে ওড়িশা সীমানা এলাকা দত্তপুর সৈকত পর্যন্ত ওয়াচ টাওয়ারগুলিতে সর্বক্ষণের জন্য নজরদারি বসানো হয়েছে। প্রতিটি ঘাটে নুলিয়াকে একটি করে সাইরেন দেওয়া হয়েছে। কোনও পর্যটক বিপজ্জনক ভাবে স্নান করলে বা কোনও বিপদ ঘটলেই সাইরেন বাজিয়ে সকলকে সচেতন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।