এয়ারকন্ডিশনিং জামা বানিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘে আমন্ত্রিত হুগলির ‘প্রফেসর শঙ্কু’ রূপম


চন্দননগর: গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে এয়ারকন্ডিশনিং পিল তৈরি করেছিলেন প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। তাঁর ওই পিল জ্যাকেটের পকেটের মধ্যে রাখলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। প্রবল গরমেও শরীর ফুরফুরে থাকে। কোনও কষ্ট হয় না। প্রফেসর শঙ্কুর মতোই একেবারে ছোটবেলা থেকে নানারকম গ্যাজেট তৈরি করার নেশা ভদ্রেশ্বর থানার আলতাড়া গ্রামের রূপম ঘোষের। আবিষ্কারের সেই নেশার টানেই ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া রূপম তৈরি করে ফেলছিলেন এক ধরনের জ্যাকেট। শরীর ঠান্ডা রাখতে যার জুড়ি মেলা ভার। পিল নয়, ওই জ্যাকেট পরে অনায়াসে প্রবল রোদে ডিউটি করতে পারবেন ট্রাফিক পুলিস। রোদে পুড়ে কাজ করতে কোনও অসুবিধা হবে না কৃষকদের। এই জ্যাকেট তৈরি করে ইতিমধ্যেই দেশে নজর কেড়েছেন রূপম। এবার তিনি চলেছেন বিশ্ব জয় করতে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের আমন্ত্রণে ২৫ জুলাই স্টিম সামিটে যোগ দেবেন ভদ্রেশ্বরের গর্ব।
স্কুলের এগজিবিশনে তাঁর তৈরি জ্যাকেট প্রথম দেখিয়েছিলেন রূপম। নাম দিয়েছিলেন বিট দ্য হিট কুলিং জ্যাকেট। এই এয়ারকন্ডিশনিং জ্যাকেট আবিষ্কার করেই ২০১৭ সালে মোদি সরকারের কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার পান চন্দননগর বঙ্গ বিদ্যালয়ের ছাত্র রূপম। ওই বছরই মেলে পেটেন্টের অধিকারও। এই আবিষ্কারের পর রূপমকে ফেলো পদ দেয় নিউ ইয়র্ক অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স। এবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের ডাকে ২৫ জুলাই স্টিম সামিট, ২০১৮-তে যোগ দিতে যাচ্ছেন রূপম। এই সামিটে বিশ্বের ১৮০ জন বিজ্ঞানী অংশ নিচ্ছেন। ভারত থেকে রূপম ছাড়াও যাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর আরও দুই বিজ্ঞানী।

রূপমের বাবা মানবেন্দ্রনাথ ঘোষ হাওড়ার একটি বেসরকারি কারখানার কর্মী। মা রূপালি ঘোষ গৃহবধূ। তাঁদের একমাত্র সন্তান রূপম। রূপমের মা রূপালিদেবী বলেন, ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানানোর ব্যাপারে ছেলের ঝোঁক ছিল। প্রতি বছরই স্কুলের সায়েন্স এগজিবিশনে বিভিন্ন মডেল বানিয়ে অংশ নিত।

রূপম জানিয়েছেন, তাঁর তৈরি এই জ্যাকেটের ভিতরে মোট তিনটি ছোট পাখা রয়েছে। সামনে দু'টি, পিছনে একটি। সামনের পাখা দু'টি ভিতরের গরম শরীরের বাইরে বের করে দেয়। জ্যাকেটের পিছনে রয়েছে ওয়াটার বাবল সিস্টেম। পিছনের পাখার সাহায্যে জলের বুদবুদকে কাজে লাগিয়ে জ্যাকেট ঠান্ডা রাখা হয়। ছোট ব্যাটারি দিয়ে চলে গোটা সিস্টেম। এই জ্যাকেটের সঙ্গে রয়েছে সোলার প্যানেল বসানো টুপি। টুপি থেকেই চার্জ হয় লিথিয়াম অয়েল ব্যাটারি। তাই এই জ্যাকেট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও খরচ নেই। শুধু তাই নয়, জ্যাকেট নোংরা হলে ধোয়াও যাবে খুব সহজে। এই ধরনের একটি জ্যাকেট তৈরি করতে প্রায় দু' হাজার টাকা খরচ পড়বে। রূপম জানান, ভয় না পেয়ে এগিয়ে আসুন। সবাই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা নিন। তাহলেই আমাদের দেশ দ্রুত এগবে।