টান মেরে শিশুকে ফেললেন জেঠিমা


পারিবারিক বচসার জেরে নিজের দু'বছরের ভাইপোকে বিছানা থেকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন জেঠিমা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এহেন একটি ভিডিও পোস্ট ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কোচবিহারের মাথাভাঙা এলাকা। 

মাস পাঁচেক আগের ওই ঘটনার ভিডিওটি গত শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন এক ব্যক্তি। মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেটি। ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, একটি ঘরের মধ্যে বিছানায় বসে আছে শিশুটি। সম্পর্কে জেঠিমা ওই মহিলা ঘরে ঢুকেই শিশুটিকে এক টানে বিছানা থেকে মাটিতে ছুড়ে ফেলে বেরিয়ে গেলেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা দেখতে পেয়ে সরব হন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ না জানালেও সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে মাথাভাঙা থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ সুত্রে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মাথাভাঙা পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আমলাপাড়ার সুদীপ ও রুমি দে-র দু'বছরের পুত্রসন্তান সৌরদীপ দে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই মহিলার নাম রুনা দে, সম্পর্কে সুদীপের বউদি।      

শিশুটির মা রুমি দে বলেন, ''ছয়-সাত মাস আগে লক্ষ করছিলাম, আমি আড়াল হলেই হঠাৎ বিকট গলায় আমার ছেলে কাঁদত। আমার সন্দেহ হচ্ছিল, ওকে কেউ অত্যাচার করছে। গত ১০ জানুয়ারি দুপুরে নিজের মোবাইল ক্যামেরা অন করে সন্তানকে বিছানার উপরে রেখে স্নানে যাই। ফিরে এসে দেখি, আমার সন্তান মেঝেতে পড়ে রয়েছে কাঁদছে। তখন মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও দেখে পুরো ঘটনাটা দেখতে পাই।'' তিনি বলেন, ''এ নিয়ে  আমার জায়ের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বচসা হয়। প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে চাইলেও হাতে টাকাপয়সা না থাকায় কোথাও যেতে পারিনি। ঘটনার পাঁচ মাস সময় পার হয়ে গেলেও কিছু করতে না পারায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম অভিযুক্তের শাস্তি হোক। তাই গতকাল আমার এক পরিচিতকে দিয়ে ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করি। প্রশাসনের নজরে এলে যদি সুবিচার পাই, সেই আশাতেই করেছি।''

যদিও অভিযুক্ত রুনা দে পুরো ঘটনাটাই অস্বীকার করেছেন। মাথাভাঙা থানার আইসি প্রদীপকুমার সরকার বলেন, ''সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গিয়েছে, একটি শিশুকে সম্পর্কে তার জেঠিমা নির্যাতন করছে। এ নিয়ে শিশুটির পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ না জানালেও আমরা তদন্ত শুরু করেছি।'' অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা শিশুসুরক্ষা বিভাগের জেলা আধিকারিক তেনজি সি ভার্মা বলেন, "শিশুদের উপর কোনওরকম অত্যচার অপরাধমূলক কাজ। পুলিশ তদন্তে নেমেছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা হবে।"

ওই ঘটনায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় তো বটেই, সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শিশুদের উপর অত্যাচারে কী ধরনের মানসিকতা কাজ করে? এ ব্যাপারে কোচবিহার জেলা হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক চিরঞ্জীব রায় বলেন, ''অনেক সময় পরিবারের মধ্যেই এ ধরনের শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পারিবারের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থের জেরেই শিশুরা শিকার হয়। এ সব ক্ষেত্রে অনেক সময় বাবা-মায়েরও ততটা নজর থাকে না। তবে এই ঘটনায় কী হয়েছে তা না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।'' তিনি আরও বলেন, ''এই বয়সে যে কোনও ধরনের অত্যাচার ভবিষ্যতে ওই শিশুর পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। মানসিক ভাবে সে ভেঙে পড়তে পারে অথবা অপরাধের জন্ম নিতে পারে এই খারাপ অভিজ্ঞতা থেকে।''