মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়লে চাকরি খোয়াতে পারেন বহু মহিলা!


কর্মরতা মহিলাদের জন্য সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করার কথা আগেই ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। আগামী অর্থবর্ষেই চালু হতে চলেছে নয়া নিয়ম। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, এ দেশে তা চালু হলে মহিলাদের ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। এই নিয়মের জেরে চাকরি খোয়াতে পারেন বহু মহিলা।

মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে টিমলিজ় সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি পরামর্শদাতা সংস্থা। উড়ান, তথ্যপ্রযুক্তি, নির্মাণ, শিক্ষা, ই-কমার্স, উৎপাদন, ব্যাঙ্ক, রিটেল, পর্যটন ক্ষেত্রের মতো অন্তত ১০ রকমের সংগঠিত ক্ষেত্রের ৩০০টি সংস্থার উপরে সমীক্ষা চালিয়েছে তারা। আর তাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী অর্থবর্ষে ওই দশটি ক্ষেত্রে ১১ লক্ষ থেকে ১৮ লক্ষ মহিলা চাকরি হারাতে পারেন। সমীক্ষকদের মতে, এই সংখ্যাটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। সব মিলিয়ে কর্মহারা মহিলার সংখ্যা কোটিও ছাপিয়ে যেতে পারে।

কিন্তু কেন? যে নিয়মের জন্য কানাডা বা নরওয়ের মতো দেশে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের সংখ্যা উর্ধ্বমুখী, সেই একই নিয়মের জেরে ভারতে কেন কাজ হারাবেন মেয়েরা? সংস্থার মতে, মোদী সরকারের এই নীতি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে অলাভজনক। বড় সংস্থাগুলির উপরে তেমন প্রভাব না ফেললেও, ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলিকে তা ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। ফলে সন্তানসম্ভবা মহিলাদের ছাঁটাইয়ের হারও বাড়বে। অনেকের মতে, যে সব দেশে এই ধরনের নিয়ম চালু রয়েছে, সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির উপর কর ছাড়ের দিকটিও বিবেচনা করা হয়। এ দেশে সেই ধরনের কোনও ঘোষণা এখনও পর্যন্ত সরকার করেনি।

এমনিতে পশ্চিমি দুনিয়ার তুলনায় এ দেশে মেয়েদের কাজের সুযোগ কম। মাত্র ৩০ শতাংশ মহিলা কর্মরত। বেতন-বৈষম্যেও ভারত প্রথম সারিতে। ৫০ শতাংশ মহিলা একই কাজ করে কম বেতন পান। গলদ রয়েছে সামাজিক ভাবনাতেও। সংসার চালাতে পুরুষের আয় কম পড়লে তবেই মেয়েরা ঘরের গণ্ডি ছেড়ে বাইরে বেরোবে— এই মানসিকতাই বেশি। বহু ক্ষেত্রে আবার বয়স্ক বা শিশুদের দেখাশোনার জন্য বিয়ের পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয় মেয়েরা। এই সমস্যায় লাগাম দিতে মোদী সরকার সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিল। তবে শেষমেশ সেই নিয়মের ফাঁসে মেয়েদের নাভিশ্বাস উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা।