চার বছর বয়সেই আস্ত গল্পের বই লিখে তাক লাগিয়ে দিল অয়ন


শিশু বয়সে বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পায়ে হেঁটে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার পথে মাইলক্রোশের ফলক দেখে সংখ্যা জ্ঞান হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পরে তিনি বর্ণ পরিচয়ও সৃষ্টি করেছিলেন৷

চার বছরের ছোট্ট এক শিশুর মধ্যে বর্ণ পরিচয় স্রষ্টার প্রতিভায় খুঁজে পাচ্ছেন পরিজন থেকে স্কুলের শিক্ষকেরা৷ কারণ, এই বয়সে অন্যান্য শিশুরা যখন খেলাধুলোয় ব্যস্ত থাকে, হয়তো বা সামান্য অক্ষর জ্ঞান রপ্ত করতে শুরু করে৷ ঠিক তখনই কি না ৪ বছর বয়সে আস্ত একখানা গল্পের বই লিখে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অসমের লখিমপুর জেলার অয়ন গোয়ান৷ স্বভাবতই মনে করা হচ্ছে, অয়নই ভারতের সব থেকে কনিষ্টতম লেখক৷ অয়নের লেখা বইয়ের নাম 'হ্যানিকম্ব'৷ বইটিতে আছে ৩০টি ছোটদের গল্প৷ বইটিকে ছোটোদের কাছে আর্কষর্ণীয় করে তুলতে গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঙ্গে ছাপা হয়েছে বেশ কিছু ছবিও৷ সেগুলিও অয়নেরই আঁকা৷ বইটির মূল্য মাত্র ২৫০ টাকা৷
 
জানা গিয়েছে, অসমের লখিমপুর জেলার সেন্ট মেরি স্কুলের ছাত্র সে৷ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তার বইটি প্রকাশিত হয়৷ মাত্র ৪ বছর বয়সেই আস্ত একটি গল্পের বই লিখে ফেলার অসাধারণ এই প্রতিভার জন্য ইতিমধ্যেই 'ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডস' তাঁকে 'গুহাইন' উপাধী দিয়েছে৷ কারণ, ৩০টি গল্প লেখার পাশাপাশি প্রতিটি গল্পের নকশাও সে নিজেই করেছে৷ 'ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডস' এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা সারা বিশ্বের অসাধারণ প্রতিভাবানদের সম্মানিত করেন৷ সংস্থার তরফে জানুয়ারি মাসে শিশুটির নাম অসাধারণ প্রতিভাবানদের তালিকায় যুক্ত করা হয়৷ একই সঙ্গে তাঁর এই কৃতিত্বের জন্য তাঁকে সম্মানিত করা হয়৷ দেওয়া হয় শংসাপত্রও (সার্টিফিকেট)৷

হ্যানিকম্ব বইয়ের লেখক তথা চার বছরের খুদেটি কচি গলায় জানায়, ''দাদু দিদার কাছেই সে থাকে৷ কারণ, কর্মসূত্রে বাবা,মা থাকেন মিজোরামে৷'' কিভাবে এত অল্প বয়সে এতোগুলো গল্প লিখে ফেললে? লাজুক কন্ঠে অয়নের সর জবাব, ''রোজ আমার চারপাশে যা চোখ মেলে দেখি তাকেই মনের মণিকোঠায় ধরে রাখি৷ তারপর অবসরে সেগুলো লিখে ফেলি৷ এভাবেই ৩০ খানা গল্প লিখে ফেলার পর বাবা, মা ও দাদু, দিদা সিদ্ধান্ত নেন সব গল্পগুলোকে নিয়ে আমার নামে বই প্রকাশ করার৷''

শুধু গল্প লেখা নয়, কচি বয়সেই ইন্টারনেট দুনিয়ার সঙ্গে সমানভাবে সাবলীলও সে৷ দাদু, দিদার পাশাপাশি নিয়মিত চ্যাটের মাধ্যমে সুদূর মিজোরামে থাকা বাবা, মা-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখে সে৷চ্যাটের মাধ্যমেও সবসময় সে চেষ্টা করে নতুন কিছু লেখার৷ অয়নের চোখে তাঁর বাবা পুর্নকান্ত গোগোই তাঁর আদর্শ৷ তবে বাবার পাশাপাশি দাদু, ঠাকুমা ও মাও তাকে নিয়মিত অনুপ্রেরণা দিতেন৷ সেখান থেকেই সে রোজ নতুন কিছু করার তাগিদ অনুভব করে৷ তারই ফসল হিসেবে কচি হাতে লিখে ফেলেছে আস্ত একটা গল্পের বই-ই৷ অয়নের দাদু একজন ফুটবল প্রেমী৷ তিনিই ওর সবচেয়ে সেরা বন্ধু৷ অয়নের চোখে দাদু আস্ত একজন 'চকোলেট ম্যান'৷

শুধু মাত্র লেখা নয়, যোগা, ব্যাডমিন্টন, ফুটবলের পাশাপাশি চোখ জুড়ানো কার্টুন আঁকাতেও পারদর্শী ছোট্ট অয়ন৷ স্বভাবতই পরিজনদের পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে গর্ববোধ করেন স্কুলের শিক্ষক থেকে প্রতিবেশীরা৷ স্কুলের অন্য সহপাঠীদের অভিভাবকদের কাছে এই প্রজন্মের 'আইকন৷'