পাখিদের ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি !


কলকাতা: শখের ফটোগ্রাফারদের উৎপাতে অতিষ্ঠ বনদপ্তর। উত্তরের মতো দক্ষিণের বনাঞ্চলেও, এবার পর্যটকদের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছে বনদপ্তর। প্রসঙ্গত, বর্ষাকালে পশু-পাখিদের অধিকাংশের প্রজননের সময় হওয়ায়, এই সময় জঙ্গলে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে। সেই মতো গত ১৬ জুনের পর থেকে উত্তরের অধিকাংশ বনাঞ্চলই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলিতে (সুন্দরবন ব্যতীত) সেভাবে কোনও বড় বন্যপ্রাণী না থাকায়, এখানে পর্যটকদের ঢোকার ক্ষেত্রে কড়া কোনও বিধি-নিষেধ সাধারণত আরোপ করা হয় না। এই অবস্থায় শখের ফটোগ্রাফারদের উৎপাতে বেশ অতিষ্ঠ বনাধিরিকরা। তাই এবার দক্ষিণবঙ্গেও উত্তরের মতো পর্যটকদের উপর নজর রাখতে চাইছে বনদপ্তর।

দপ্তর সূত্রের দাবি, সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার বিভূতিভূষণ ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে এই মর্মে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। বনদপ্তরের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বনাঞ্চলে হুডেড পিট্টা বা সবুজ শুমচা নামক একটি প্রজননকালীন পরিযায়ী পাখি এই সময় অনেক দেখা যায়। উত্তরের পাহাড়ি বনাঞ্চলের এই পাখি দক্ষিণবঙ্গের কিছু জঙ্গলে এই সময় প্রজননের জন্য চলে আসে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এরা স্থানীয়ভাবেও থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় গত কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছিল, এই বনাঞ্চলে শখের ফটোগ্রাফারদের উৎপাত বেড়ে গিয়েছে। যাতে এই পাখিদের প্রজননকালে খুব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এরপরেই বনদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভূতিভূষণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলা হয়েছে এই সময় বনাঞ্চলে যারা আসবেন, তাঁরা কোনও ফটোগ্রাফি করতে পারবেন না। ফটোগ্রাফি করা অবস্থায় অথবা পাখিদের বিরক্ত করছেন, এরকম অবস্থায় কোনও পর্যটককে ধরা হলে, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিনহা বলেন, পর্যটকরা এই সময় উত্তরের জঙ্গলে ঘুরতে যেতে পারেন না। এই অবস্থায় অনেক পর্যটকই এই সময় দক্ষিণের বিভিন্ন বনাঞ্চলে আসেন। তাই তাঁরা কোনওভাবেই পর্যটকদের অসুবিধা করতে চান না। কিন্তু সম্প্রতি কিছু শখের ফটোগ্রাফার যেভাবে বনাঞ্চলে পশু-পাখিদের বিরক্ত করছে, তা কোনওভাবে কাম্য নয়। তাই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে তাঁরা বাধ্য।

বনদপ্তর সূত্রের দাবি, বিভূতিভূষণ ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে এরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরেও দেখা যাচ্ছে বহু শখের ফটোগ্রাফার বনাঞ্চলে গিয়ে হুডেড পিট্টা ছাড়াও একাধিক পাখির ছবি তুলছে এবং পরে তা সোশ্যাল মিডিয়াতে তুলে ধরা হচ্ছে। এই অবস্থায় বন্য পশু-পাখিদের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে বনাধিকারিকরা আশঙ্কিত। তাই সরাসরি পর্যটকদের উপর নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের প্রতিটি বনাঞ্চলের কর্তাদের। বনদপ্তরের এক কর্তার কথায়, দক্ষিণবঙ্গে আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল (চিন্তামণি কর অভয়ারণ্য, বেথুয়াডহরি, বল্লভপুর, রামনাবাগান, পারমাদন) রয়েছে। সেখানেও পর্যটকরা বন্যপ্রাণীদের উপর উৎপাত করছে কি না, তাতে নজরদারি রাখছেন সংশ্লিষ্ট বনকর্তারা। প্রয়োজনে দক্ষিণবঙ্গের বাকি বনাঞ্চলেও ছবি তোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে বলেও, ওই বনকর্তার দাবি। বিশিষ্ট পক্ষীবিশারদ কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ফটোগ্রাফি করার ক্ষেত্রে কিছু নীতি মেনে চলা উচিত। কিন্তু এখন অনেকেই তা মানছে না। এর ফলে পশু পাখিদের প্রজনন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।