ভাগাড়কাণ্ডের জেরেই রাতারাতি চাহিদা বেড়েছে কচ্ছপের


কলকাতা: ভাগাড়ের পশুর মৃতদেহ বা মরা মুরগির মাংস বিক্রি হওয়ার ঘটনা ক্রমশ প্রকাশ্যে আসায় বিকল্প মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিকল্প হিসেবে অনেকেই বেছে নিচ্ছন কচ্ছপকে। সেকারণেই কচ্ছপের মাংসের চাহিদা বাড়ছে। সম্প্রতি হাওড়া এবং বিরাটি থেকে বিপুল পরিমাণ কচ্ছপ উদ্ধারের ঘটনায় ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এরকমই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। গরমকালে এই বিপুল পরিমাণ কচ্ছপ উদ্ধার হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেন তদন্তকারীরা। কচ্ছপের মাংসের চাহিদা সাধারণত শীতকালে সর্বাধিক থাকে। কিন্তু গরমকালে হঠাৎ করেই তে কচ্ছপ উদ্ধার হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়েই তাঁরা দেখেন, কলকাতা সহ শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় মুরগি এবং অন্যান্য মাংসের চাহিদা কমায় কচ্ছপের চাহিদা বেড়েছে। সেই কারণেই এই বিপুল পরিমাণ কচ্ছপ ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আনা হচ্ছিল।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে হাওড়া এবং বিরাটি থেকে মৃত এবং জীবীত মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কচ্ছপ উদ্ধার হয়েছিল। সবই আনা হচ্ছিল মাছ ভর্তি বড় বড় বাক্সের আড়ালে। এখানেই গোয়েন্দাদের অনুমান, ওড়িশা ও অন্ধ্র থেকে প্রতিদিনই শতাধিক ট্রাকে করে মাছ এ'রাজ্যে আসছে। তার আড়ালে এই কচ্ছপও নিয়মিত আনা হয়ে থাকতে পারে। তদন্তকারী সূত্রের দাবি, একটি ট্রাক ধরা পড়লেও, প্রতিদিনই হয়তো কোনও না কোনও ট্রাকে এভাবেই নিয়মিত কচ্ছপ এরাজ্যে ঢুকছে। তাই ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইছে কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণ অপরাধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডব্লুসিসিবি)। পাশাপাশি এরাজ্যে কীভাবে কচ্ছপ ঢুকছে, তাও খতিয়ে দেখতে চাইছে তারা। প্রাথমিকভাবে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ধৃতরা সকলেই ক্যারিয়ার। তাই তাদের কাছ থেকে বিশেষ কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে একটি বিষয়ে তদন্তকারীরা নিশ্চিত, যে কচ্ছপগুলি উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি কলকাতার জন্যই আনা হয়েছিল। এর আগে শীতের সময় যত কচ্ছপ উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশ থেকে আসত, তা মূলত বাংলাদেশে পাচার করা হতো। কিছু কচ্ছপ এরাজ্যের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের হাতে যেত। কিন্তু এবার এত বড় পরিমাণ কচ্ছপ শুধুমাত্র এরাজ্যের জন্য এসেছে শুনেই তদন্তকারীদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। বিশেষ করে গরমের সময় রাজ্যে কচ্ছপের কেন এত চাহিদা উঠল, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেন তদন্তকারীরা।

সেই উত্তরের সন্ধানে নেমেই তদন্তকারীরা একটি সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন, মূলত এই মুহূর্তে কলকাতা সহ শহরতলিতে বিকল্প মাংস হিসেবে কচ্ছপের চাহিদা এখন ঊর্ধ্বমুখী। ভাগাড়ের মাংসের ভয়ে অনেকেই এখন মুরগি খেতে চাইছেন না। এই অবস্থায় কচ্ছপের মাংস খাওয়ার দিকে ঝোঁক বাড়ছে। তাই জেলায় জেলায় সে সমস্ত কারবারিরা লুকিয়ে কচ্ছপের মাংস বিক্রি করে, তারা ডিলারদের থেকে আরও বেশি পরিমাণে কচ্ছপের মাংস চাইছে। সেই মতো নিয়মিতই কচ্ছপ রাজ্যে ঢুকছে। 
মুরগির মাংস পাওয়া যায় চাষের মাধ্যমে। কিন্তু কচ্ছপ মেলে নদীতে। সে কারণেই তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন, কচ্ছপ কীভাবে মুরগির বিকল্প হয়ে উঠছে? প্রাথমিক তদন্তের পরেও কোনও সুনিদিষ্ট উত্তর নেই তাঁদের কাছে। তবে তাঁদের অনুমান, কোথাও কোনও হ্যাচারির মাধ্যমে কচ্ছপ চাষ করা হয়ে থাকতেই পারে। এর আগেও উত্তরপ্রদেশে যখন ছ'হাজারের বেশি কচ্ছপ উদ্ধার হয়েছিল, তখন এই তথ্য একবার প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু সেবিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই 'অফ-সিজিনে' এত পরিমাণ কচ্ছপ নদী থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে গোয়েন্দারা অনেকটাই 'নিশ্চিত' অন্ধ্রপ্রদেশ বা ওড়িশার কোনও হ্যাচারিতেই এত পরিমাণ কচ্ছপ জন্মাচ্ছে। তাই এই গরমের সময়ও এত পরিমাণ কচ্ছপ পাওয়া যাচ্ছে। এখন এই চক্রকে ধরতে আরও তদন্ত প্রয়োজন বলেই ডব্লুসিসিবি'র তদন্তকারীদের ধারণা।