তিন হাসপাতাল ঘুরে গলা থেকে বেরোল ব্যাটারি


সপ্তাহখানেক আগে ব্যাটারি গিলে ফেলেছিল পাঁচ বছরের একরত্তি ছেলেটা। তিন হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে শুক্রবার সেই ব্যাটারি বার করা হল খুদের শ্বাসনালী থেকে!

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চম্পাহাটির বাসিন্দা আফতার আলি মোল্লার ছেলে রেহান মোল্লা খেলতে গিয়ে বিপদ ঘটায়। মুখে ঢুকিয়ে ফেলে প্রায় ২ সেন্টিমিটার ব্যাসের একটি ব্যাটারি। এর পরেই রেহানের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরিবার সূত্রে খবর, রাতেই রেহানকে নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে যাওয়া হয়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, কিছু বোঝা যাচ্ছে না। রেহানকে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানে এক্স-রে এবং প্রাথমিক পর্বের কয়েকটি পরীক্ষার পরে বোঝা যায় যে, রেহানের গলায় আটকে রয়েছে ব্যাটারি। কিন্তু চিকিৎসক জানান, অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো সেখানে নেই। তাই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় একরত্তি রেহানকে। শ্বাসকষ্টের কারণে ঠিক করে খেতেও পারছিল না সে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, শ্বাসনালী আর খাদ্যনালীর মাঝে আটকে ব্যাটারিটি। যার প্রভাব পড়ছে ফুসফুসেও। প্রথমে রেহানকে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হলেও পরে স্থির হয় যে, ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকেরাই অস্ত্রোপচার করবেন।

শুক্রবার সকালে রেহানের অস্ত্রোপচার শুরু হয়। ইএনটি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রামানুজ সিংহের তত্ত্বাবধানে চার জন চিকিৎসক প্রায় ঘণ্টা খানেকের অস্ত্রোপচার করে ব্যাটারি বার করেন। রামানুজবাবু জানান, প্রায় আট দিন ধরে ভিতরে ব্যাটারি থাকায় শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে গিয়েছিল। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি, দেহের ভিতরে ব্যাটারির ডিসচার্জ হয়েছে। যার জেরে সমস্যা আরও জটিল হয়ে যায়। তাঁর কথায়, ''ইসোফেগাস্কোপি এবং ব্রঙ্কোস্কোপির মাধ্যমে ব্যাটারি বার করা হয়েছে। এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল।'' যদিও আরও কয়েক দিন রেহানকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে। দিন ক'দিন তরল খাবারও দেওয়া হবে তাকে।

ছেলের সফল অস্ত্রোপচারের পরে স্বস্তিতে বাবা। আফতার বলেন, ''শেষ কয়েক দিন এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতাল ঘুরেও কোনও আশা পাইনি। প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। ছেলেটা ঠিক মতো কথাও বলতে পারছিল না। এখন কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়েছি।''