হাওড়া স্টেশনে দালালের খপ্পরে খোদ রেলকর্তা


নৈরাজ্যের বেড়া টপকে পনেরো লক্ষ যাত্রীর নিত্যযাত্রা হাওড়া স্টেশনে৷ রেল যখন নিরাপত্তা ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে জোর দিতে বলছে তখন ওই নৈরাজ্যের ব্যবস্থা কীভাবে চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন যাত্রীদের মধ্যে৷ দালাল দৌরাত্ম্যে রীতিমতো তিতিবিরক্ত যাত্রীরা৷ দালালের খপ্পর থেকে বাদ যাচ্ছেন না খোদ রেলকর্তাও৷

দিন দুয়েক আগে হাওড়া নিউ কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গিয়ে রেল টিকিটের খপ্পরে পড়েন রেলের এক প্রথম শ্রেণির কর্তা৷ কর্তাকে উদ্দেশ্য করেই দালালরা বলে, 'কাঁহা কা রিজার্ভেশন চাহিয়ে? ৫০০ রুপিয়া জ্যাদা দেনে মে মিল যায়েগা'৷ দালাল দৌরাত্ম্য দেখে কর্তার চোখ তো কপালে৷ তিনি আরপিএফকে টাস্ক ফোর্স গঠন করে এই দৌরাত্ম্যে লাগাম পরানোর নির্দেশ দেন৷ আজ শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু করছে এই বিশেষ বাহিনী৷ যাত্রীদের থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে, টিকিট পরীক্ষক ধরে জায়গা করে দেওয়ার পদ্ধতির পাশাপাশি সংরক্ষিত টিকিট লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়ে পড়ার মতো একাধিক পন্থা নেয় দালালরা৷ টাস্ক ফোর্স নিরপেক্ষতা রেখে কতটা কাজ করতে পারবে তা নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছে৷

এদিকে স্টেশন থেকে বেরিয়েই সিগারেটের ডালা৷ যাত্রীরা সেখানে সিগারেট কিনে জ্বালালেই বিপত্তি। আইন দেখিয়ে জরিমানার নামে টাকা আদায় চলছে বলেও অভিযোগ৷ যাত্রীদের অভিযোগ, সিগারেট খেলে দোষ, কিন্তু বিক্রি করতে বাধা নেই৷ এই ডালা যে 'ফাঁদ' হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে, তা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন যাত্রীরা৷ হাওড়া স্টেশনে যে টিকিট ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে, তা নিয়েও চলছে দালালি৷ ভেন্ডিং মেশিনে টিকিট কাটতে সড়গড় নয় এমন যাত্রীদের টিকিট কাটায় সহযোগিতা করে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে পারিশ্রমিক হিসেবে৷ এমন অভিযোগও উঠেছে।

হাওড়া স্টেশন থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে সমস্ত ভেন্ডিং স্টলগুলি৷ ফলে জল থেকে খাবার- নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও পানীয় জলের জন্য অভাব দেখা দিয়েছে৷ ফলে চড়া দামে জল ও খাবারও বিক্রি হচ্ছে৷ বইয়ের স্টলে বিক্রি হচ্ছে বালিশ৷ যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী যখন দিতে পারছে না রেল, তখন যাত্রী হয়রানি বাড়াতে নির্দেশ দিচ্ছেন কর্তারা৷ থুতু ফেলার জন্য জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে টিকিট পরীক্ষকদের৷ কিন্তু এতে বিপাকে পড়েছেন তাঁরাই৷ সব মিলিয়ে চূড়ান্ত নৈরাজ্যের মধ্যেই হাওড়া স্টেশনে রেলযাত্রা নিত্যযাত্রীদের।