গলায় বিঁধে দশটি সুচ, সুস্থ জীবন ফিরে পাবে কৃষ্ণনগরের কিশোরী?


পেরেকের পর সুচ। গোবরডাঙার প্রদীপকুমার ঢালির পর কৃষ্ণনগরের অপরূপা বিশ্বাস। প্রদীপকুমারের পাকস্থলীতে জমা ছিল ৬৩৯টি পেরেক। আর চোদ্দো বছরের অপরূপার গলায় আটকে দশটি সুচ। প্রদীপকুমারকে অস্ত্রোপচার করে শাপমুক্ত করেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সার্জনরা। অপরূপা ভরতি এনআরএস হাসপাতালে। আজ, মঙ্গলবার তার অস্ত্রোপচার। সুস্থ জীবন কি ফিরে পাবে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা?

১০ দিন আগে হঠাৎ করেই গলা ব্যথার শুরু। বাড়ির লোক ভেবেছিল ঠান্ডা লেগেছে অপরূপার। খুব একটা গা করেননি তাঁরা। কে জানত, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীটি দশ-দশটা সুচ গলধঃকরণ করে ফেলেছে! খাওয়া-দাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ির লোকের টনক নড়ে। প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণনগর হাসপাতালে। সেখানেই এক্স রে করে দেখা যায় খাদ্যনালি ভেদ করে দিয়ে ফুসফুস, লিভারের দিকে তাক করে রয়েছে বেশ কয়েকটি সুচ। যে কোনও মুহূর্তে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে কিশোরীর একাধিক অঙ্গে।

সোমবার সকালে কিশোরীকে কৃষ্ণনগর থেকে এনআরএসে নিয়ে আসা হয়। ভরতি করা হয় ইএনটি সার্জন ডা. মনোজ মুখোপাধ্যায়ের অধীনে। কিশোরীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অতীশ হালদার জানিয়েছেন, সুচগুলো যদি খাদ্যনালির ভেতর সীমাবদ্ধ থাকত তবে ইসোফেগোসস্কোপির মাধ্যমে সেগুলো বের করা যেত। কিন্তু যদি খাদ্যনালি ভেদ করে সুচ যদি ফুসফুস কিংবা হৃৎপিণ্ডের দিকে এগিয়ে যায় তবে কার্ডিয়াক সার্জনদের উপস্থিতিতে অস্ত্রোপচার করতে হবে।

কিন্তু কীভাবে কিশোরীর খাদ্য তালিকায় সুচ জায়গা করে নিল? পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির অধিকর্তা প্রদীপ সাহা ও আরজিকর হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিস্ট রাজর্ষি নিয়োগী জানালেন, পাইকা রোগে আক্রান্ত হলে খাদ্য তালিকায় সুচ, পেরেক, মাটির মতো বিজাতীয় জিনিস ঢুকে পরে। এটি এক ধরনের মানসিক রোগ। রোগের উৎস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এর সঙ্গে মানসিক রোগ, উদ্বেগ, অপুষ্টি, রক্তাল্পতার সম্পর্ক রয়েছে। কেউ আবার বলছেন উদ্বেগ থেকেই এই রোগের জন্ম। পড়াশোনার চাপ, মা-বাবার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি থাকলে শিশুর উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। তার থেকেই জন্ম নিতে পারে 'পাইকা'।

আপাতত অস্ত্রোপচারের পর ওই কিশোরীর সাইকোলজিকাল অ্যাসে করে রোগের গভীরতা মাপতে হবে। তারপর শুরু করতে হবে কাউন্সেলিং। তবেই পুরোপুরি শাপমুক্ত হবে ওই চতুদর্শি। মনোবিজ্ঞানীদের দাবি, শিশুদের মধ্যে এই অখাদ্য খাওয়ার প্রবণতা বিরল নয়। সম্প্রতি নেহা সাউ নামে এক ১২ বছরের মেয়ের পাকস্থলী থেকে আড়াই কেজি চুল মিলেছে। কিছুদিন আগেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজে সার্জনরা ২১ বছরের এক যুবক রবি দাসের পাকস্থলী থেকে লোহার রড, চামচ, জিভছোলা, টুথব্রাশ বের করেন। তবে রবি দাসের ক্ষেত্রে প্রতিটি জিনিসই সরাসরি পাকস্থলীকে চলে গিয়েছিল। অপরূপার ক্ষেত্রে যদিও সমস্যা হয়েছে। গিলে ফেলা সুচগুলো খাদ্যনালিতে আটকে গিয়েছে।

কিশোরীর মা অর্পিতা বিশ্বাস এক্স রে রিপোর্ট দেখে হতভম্ব! কী করে মেয়ের গলার ভেতর দশ দশটা সুচ এল তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত চুপচাপ স্বভাবের অপরূপা। বাড়িতে খুব একটা কথাও বলে না। খাওয়ার সময় টেবিলে বসে সে আস্তে আস্তে খেত। তবে কি নিজেই চুপিসাড়ে সুচগুলো গিলে ফেলেছে? ভাবতে পারছেন না পরিবারের লোকেরা।

Highlights

১০ দিন আগে হঠাৎ করেই গলা ব্যথার শুরু।

বাড়ির লোক ভেবেছিল ঠান্ডা লেগেছে অপরূপার।

এক্স রে করে দেখা যায় চোদ্দো বছরের অপরূপার গলায় আটকে দশটি সুচ।