কাঁটা নয়, ভারত আপাতত আপনার গোলাপটাকেই দেখছে ইমরান


সংশয় ছিল, অবিশ্বাসের বাতাবরণ ছিল। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে ভারত-পাক সম্পর্ক কোন পথে গড়াবে, তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ ছিল। অকারণে এই সন্দেহ বা সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়নি। নির্বাচনী প্রচারে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভাষ্য যেরকম ছিল, তাঁর ভারতবিরোধী কণ্ঠস্বর যতটা চড়া ছিল, তাতে সংশয় তৈরি হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু নির্বাচনের ফল ঘোষিত হতেই ইমরান খানের সুর বদলে গেল। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রধানমন্ত্রিত্বের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ইমরান তা নিজের ভাষণে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন।

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যত আসন দরকার, ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ততগুলি আসন পায়নি। কিন্তু সেই জাদুসংখ্যার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে ইমরান খানের দল, অন্য প্রতিপক্ষদের অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছেন ইমরান, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়া প্রায় নিশ্চিত পাক ক্রিকেট দলের এই প্রাক্তন অধিনায়কের। অর্থাৎ জাতীয় ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা ইমরান এবার গোটা জাতিকে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন। জীবনের এই নতুন অধ্যায়ের জন্য ইমরানের প্রতি শুভেচ্ছা রইল।

নতুন অধ্যায় শুরুর আগে বা নতুন ভূমিকায় কাজ শুরু করার ঠিক প্রাক্কালে ইমরান খান যে ভাষণ দিলেন, তা কিয়ৎ অপ্রত্যাশিত। নির্বাচনী প্রচারে লাগাতার ভারতবিরোধী সুর চড়িয়ে গেলেন যিনি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নামোল্লেখ করে নিজের দেশের নির্বাচনী মঞ্চ থেকে আস্ফালন করলেন যিনি, প্রধানমন্ত্রী পদের শপথ নেওয়ার আগে তিনিই ভারতকে এমন মৈত্রীর বার্তা দেবেন, তা অনেকেই আশা করতে পারেননি। কী বলেছেন ইমরান? ইমরান বলেছেন যে, তিনি ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতি চান, দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক আদানপ্রদান বাড়াতে চান, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান চান, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান, ভারত এক পা এগোলেই তিনি দু'পা এগিয়ে দিতে চান। সাধু, ইমরান খানের এই বার্তাকে সাধুবাদ জানাতেই হচ্ছে।

ভারতের দিকে গোলাপ বাড়িয়েছেন ইমরান খান। তবে, সে গোলাপের সঙ্গে কাঁটাও রয়েছে। মৈত্রীর বার্তা দেওয়ার ফাঁকেই সুকৌশলে ইমরান বলেছেন, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, ভারতীয় সেনা সেই উল্লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে।ইমরান খানের এই মন্তব্য বা এই তত্ত্বকে ভারত অনুমোদন করে না। তবে মৈত্রীর গোলাপ গ্রহণ করার জন্য ইষৎ কাঁটা সইতে ভারত অপ্রস্তুত নয়। কাঁটা এড়িয়ে কীভাবে ইমরান খানের হাত থেকে গোলাপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে নিশ্চয়ই ভারত ভাবনা-চিন্তা করবে।

নিজের মাইলফলক ভাষণটিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সম্পর্কেও কিছু পর্যবেক্ষণ ব্যক্ত করেছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। ভারতীয় মিডিয়া তাঁকে বলিউডি ছবির খলনায়কের মতো করে উপস্থাপিত করছিল—এমন মন্তব্য শোনা গিয়েছে ইমরান খানের মুখে। ভারতীয় মিডিয়ার তরফ থেকে ইমরান খানকেও একটা বার্তা দেওয়া যাক তাহলে। ইমরান, আপনি মনে রাখবেন ভারতীয় মিডিয়া আপনাকে প্রথম বার বিদ্ধ করল, আগে কেউ কখনও বিদ্ধ করেনি, বিষয়টা এমন নয়। ইমরান, আপনার প্রাক্তন স্ত্রী রেহাম খান তাঁর আত্মজীবনীতে আপনার সম্পর্কে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তা আপনার পক্ষে মোটেই সুখকর নয়। ইমরান, আপনি সাধু-সন্তসুলভ ভাবমূর্তিতে ছিলেন আর ভারতীয় মিডিয়া আপনাকে অকারণে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপিত করল, এমনটা কিন্তু নয়। আপনি আপনার পথে হেঁটেছেন, আপনার পারিপার্শ্বিকতা আপনাকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেছে, আপনার দেশের মিডিয়ার মতো ভারতীয় মিডিয়াও সেই সব দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরেছে, প্রয়োজনে মতামত ব্যক্ত করেছে। এর বাইরে আর কিছুই নয়। অতএব, ভারতীয় মিডিয়ার ভূমিকার নেপথ্যে কোনও অসাধু উদ্দেশ্যের প্রণোদনা রয়েছে, এমনটা ভাবলে ভুল হবে।

ভারতীয় মিডিয়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দেখার জন্যও সাগ্রহ অপেক্ষায়। নির্বাচনী বিজয়ের পরে সম্প্রচারিত ভাষণে যে ইতিবাচক বার্তা আপনি দিতে চেয়েছেন, ভারতীয় মিডিয়া তাও তুলে ধরেছে। এই ইতিবাচক পথে যদি সত্যিই অগ্রসর হতে পারেন আপনি, তাহলে ভারতীয় মিডিয়া আপনাকে বাহবাও দেবে। প্রাক-প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাষণ যেন কথার কথা হয়ে থেকে না যায়। ভাষণে যা বললেন, তার মর্যাদা যেন আপনি রাখতে পারেন। ভারতীয় মিডিয়ার তরফ থেকে এই শুভকামনাই রইল।