পেনশনের সংস্কারে কী পদক্ষেপ, প্রশ্ন অর্থ কমিশনের


আগামী ১৬ জুলাই এন কে সিংহের নেতৃত্বে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন কলকাতা সফরে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, তার আগে পেনশন ক্ষেত্রে সংস্কারের  জন্য রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা জানতে চেয়েছে কমিশন। বিশেষ করে জানতে চাওয়া হয়েছে, পেনশন দিতে সরকারের বছরে কত টাকা গলে যাচ্ছে? ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম(এনপিএস)-এ রাজ্য কর্মীদের জন্য চালু করা হয়নি কেন?

এই সব প্রশ্নের প্রেক্ষিতে অর্থ দফতরের একাংশ মনে করছে, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন হয়তো একপ্রকার বাধ্যতামূলকভাবেই সরকারি কর্মীদের পেনশনের দায় আর সরকারের ঘাড়ে রাখতে দেবে না। কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্যান্য রাজ্য সরকারগুলি যে ভাবে এনপিএস তহবিলে কর্মীদের টাকা কেটে নিয়ে পেনশনের জন্য গচ্ছিত রাখছে, পশ্চিমবঙ্গকেও একই পথে যেতে বাধ্য করবে। অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ''অর্থ কমিশনের মূল বিবেচ্যই হল রাজ্যগুলির আর্থিক দায় কমানো। এ রাজ্যে এখনও পেনশনের ভার সরকারই গ্রহণ করে। বছরে এ জন্য  ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। কমিশনকে তা-ই জানানো হবে।''

 সরকারের ঘাড় থেকে পেনশনের বোঝা নামানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম চালু করে। এই প্রকল্পে বিভিন্ন সংস্থা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মীদের পেনশনের টাকা নানান তহবিলে রেখে খাটানোর ব্যবস্থা করে। শেয়ার বাজার ও সরকারি বন্ডে ভাগাভাগি করে এই টাকা খাটানো হয়।
যদিও ২০০৪ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের পেনশনের টাকা এনপিএসেই জমা হয়। যার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই। ধীরে ধীরে পেনশনের দায় থেকে মুক্তি পেতে এই তহবিলে যোগ দিয়েছে আরও ২৭টি রাজ্য। তাতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির পাশাপাশি কেরল, পঞ্জাবের মতো ঋণগ্রস্ত রাজ্যও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, দিল্লির মতো হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্য এখনও এর বাইরে রয়েছে। এনপিএসের তহবিলে ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে ২ লক্ষ  ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এখন বাকি রাজ্যগুলিও যাতে পেনশনের দায় এড়িয়ে এনপিএস-এ যোগ দেয়, সেই সুপারিশ অর্থ কমিশন করতে পারে বলে মনে করছেন অর্থ কর্তাদের একাংশ।

পশ্চিমবঙ্গে সরকার ও সরকার পোষিত প্রায় ১০ লক্ষ কর্মীর পেনশনও কি তা হলে এনপিএসে চলে যাবে? নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ''এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।'' নতুন বেতন কমিশন চালু করার বিষয়েও অর্থ কমিশন রাজ্যকে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। শেষ কবে বেতন বেড়েছে, কী পরিমাণ বকেয়া দেওয়া হয়েছে, রাজকোষে এর চাপ কত—সবই জানতে চেয়েছে কমিশন। অর্থ কর্তাদের বক্তব্য,''কমিশনকে বলা হবে বেতন বৃদ্ধির বাড়তি টাকা দিক কেন্দ্র। একা রাজ্যের পক্ষে তা বহন করা অসম্ভব।''