গরম খুন্তির ‘মার’ ছাত্রকে, ধৃত শিক্ষিকা

g

স্কুলে প্রার্থনার সময়ে খুদে পড়ুয়াদের পোশাক পরীক্ষা করছিলেন শিক্ষিকারা। তখনই কেজি টু-এর এক পড়ুয়ার সামনে যেতেই চমকে ওঠেন তাঁরা। দেখেন, পাঁচ বছরের শি‌শুটির হাতে-পায়ে পোড়া ক্ষত!

কী ভাবে হল এমন ক্ষত? বারবার জিজ্ঞাসার পরে বিশাল রায় নামে ওই খুদে শিক্ষিকাদের জানায়, ''আন্টি খুন্তি দিয়ে মেরেছে।'' এর পরেই শিশুটির মাকে স্কুলে ডেকে পাঠান লিলুয়ার ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কর্তৃপক্ষ। বিশালের মায়ের থেকে সবিস্তারে সব কিছু জানার পরে শুক্রবার সকালে তাঁকে নিয়েই থানায় যান স্কুলের শিক্ষিকারা। পড়ুয়াকে গুরুতর ভাবে আঘাত করার অভিযোগে এ দিন ওই গৃহশিক্ষিকাকে গ্রেফতার করেছে বেলুড় থানার পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বেলুড় গিরিশ ঘোষ রোডের বাসিন্দা, পেশায় ট্রাকচালক মিথিলেশ রায় ও ঊষার একমাত্র ছেলে বিশাল। সে লিলুয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র। এ দিন সকালে হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে স্কুলে যায় ওই খুদে। ওই স্কুলের অ্যাকাডেমিক ইনচার্জ অভিষেক গুপ্ত জানান, প্রার্থনার আগে শিক্ষিকারা ওই ছাত্রের পোশাক পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখতে পান ক্ষতগুলি। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন, বাড়িতেই কোনও ভাবে পুড়ে গিয়েছে ছাত্রটি। কিন্তু বিশালকে জিজ্ঞাসা করতেই সে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। অভিষেক বলেন, ''বাচ্চাটি সব জানায় আমাদের। সে আরও বলে যে, তার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।''

এর পরেই ঊষাদেবীকে স্কুলে ডেকে পাঠিয়ে শিক্ষিকারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি জানান, প্রতি দিন দুপুরে প্রতিবেশী এক আত্মীয়ার কাছে পড়তে যায় বিশাল। গত বৃহস্পতিবার সেখানেই পড়া না পারায় গরম খুন্তি দিয়ে তাকে মারতে শুরু করেন অভিযুক্ত গৃহশিক্ষিকা চন্দ্রা কুমারী। ছেলের চিৎকার শুনে প্রথমে আমল না দিলেও পরে ঊষা গিয়ে দেখেন যে, বিশালের সারা শরীরে ছেঁকার দাগ। এর পরে বিশালকে নিয়ে তিনি এবং ওই শিক্ষিকা চিকিৎসকের কাছেও গিয়েছিলেন বলে স্কুলকে জানিয়েছেন ঊষাদেবী। তবে আত্মীয় বলে প্রথমে চন্দ্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চাননি তিনি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রায় জোর করেই তাঁকে থানায় নিয়ে যান ও অভিযোগ দায়ের করেন।


কলেজপড়ুয়া চন্দ্রার অবশ্য দাবি, ''একই পড়া বারবার পারছিল না বিশাল। তাই খুব রাগ হয়েছিল বলে খুন্তি দিয়ে মেরেছিলাম। কিন্তু ওটা গরম ছিল তা বুঝতে পারিনি।'' তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই দিন বিশালকে পড়ানোর সময় রান্না করছিলেন চন্দ্রা।

এ দিন বিশালকে জায়সবাল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায় বেলুড় থানার পুলিশ। অন্য দিকে জামিন অযোগ্য ধারায় চন্দ্রাকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। এ দিন আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।