চারতলা থেকে ঝাঁপ, বেহালায় তিন ঘণ্টা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রইলেন তরুণী


এই আবাসনের ছাদ থেকেই ঝাঁপ। 

চারতলার ছাদ থেকে পড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন এক যুবতী। রাতভর তিনি যন্ত্রণায় গোঙালেন। সকাল হওয়ার আগে ওই আবাসনের কেউ জানতে পারলেন না আহত যুবতীর কথা। আশ্চর্যজনক ভাবে তার পরও প্রাণেও বাঁচলেন বেহালার পঁচিশ বছরের হরিশমা পাণ্ডে।

স্বামী দীনেশ পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। দম্পতির আড়াই বছরের একটি ছেলেওআছে। বেহালার সত্যেন রায় রোডের জগৎপুর এলাকার টিটি টাওয়ার্স নামে একটি বহুতলের চার তলার ফ্ল্যাটে থাকেন এই দম্পতি।
বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় স্ত্রী হরিশমাকে দেখতে না পেয়ে ডাকাডাকি শুরু করেন তাঁর স্বামী দীনেশ। তারপরই তিনি দেখেন ফ্ল্যাটের মূল দরজা খোলা। এত সকালে স্ত্রী বাইরে গিয়েছেন, বিষয়টাস্বাভাবিক ঠেকেনি দীনেশের কাছে। খোঁজাখুজি শুরু করতেইতাঁর চোখে পড়ে ভয়ানক দৃশ্য। দীনেশ দেখেন, আবাসনের পেছনের দিকে সিমেন্ট বাঁধানো চাতালের ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন হরিশমা। দীনেশের চিত্কার শুনে বাইরে বেরিয়ে আসেন তাঁর প্রতিবেশীরা। দ্রুত উদ্ধার করে একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে হরিশমার। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন তিনি।

খবর দেওয়া হয় বেহালা থানায়। প্রাথমিক তদন্ত করতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে যান তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী জানিয়েছেন,আবাসনের বিভিন্ন বাসিন্দাদের জেরা করে মনে হচ্ছে রাত তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। চারতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেনওই যুবতী।

চারতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েও কী ভাবে বাঁচলেন হরিশমা?
 
তদন্তকারীদের ধারণা, চারতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ মারার পর সোজা নীচে পড়েননি তিনি। আবাসনের পাঁচিলের ওপর লাগানো কাঁটাতারের বেড়ায় প্রথমে পড়েন। সেখানে ধাক্কা লেগে আবাসনের ভিতরে সিমেন্ট বাঁধানো মেঝেতে পড়েন তিনি। তাই পড়ার অভিঘাত কমে যায় এবং তাঁর আঘাত কম লাগে। পাণ্ডে পরিবারের প্রতিবেশি প্রবীণ মিত্র। তিনি বলেন,"সকালে অন্যদের চিৎকারে আমরা ছুটে যাই। গিয়ে দেখি রক্তে মাখামাখি। মাথায় থেকে রক্ত বেরোচ্ছে হরিশমার। তখনও জ্ঞান ছিল।"

অন্য এক প্রতিবেশী, রেশমী পাঠক। তিনি বলেন, "দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তি চলছিল। সেই অশান্তির জন্যই সম্ভবত আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন হরিশমা।"

সকালে ঘটনাস্থলে যখন পুলিশ পৌঁছয়, তখনও আবাসনের পেছনে মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত। পাশের পাঁচিলে কাঁটাতারের গায়ে হরিশমার পরনের সালোয়ারের ছেঁড়া টুকরো। সারারাত ধরে মেঝের ওপর পড়ে থেকে তাঁর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি যন্ত্রণায় চিৎকার করেছেন। তারপরও একজনও কেউ তাঁর আওয়াজ শুনতে পেল না? বা চার তলা থেকে পড়ার আওয়াজ কেউ পেল না? এটাই বিস্মিত করছে তদন্তকারীদেরও। যদিও ওই আবাসনের সবাই পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তাঁরা কিছু বুঝতে পারেননি। আবাসনের বাইরে যে বাড়ি রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা রাত তিনটে নাগাদ ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ পান। কিন্তু তারপর আর কোনও আওয়াজ না পেয়ে তাঁরাও আর খোঁজ করেননি। আর এটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। আবাসনের বাইরের বাসিন্দারা আওয়াজ পেলেন, অথচ ভেতরের বাসিন্দারা কিছুই জানতে পারলেন না?