বধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, ধৃত স্বামী-সহ পাঁচ


শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হল এক বধূর ঝুলন্ত দেহ। শুক্রবার সকালে, ব্যারাকপুরের মোহনপুর মধ্যপাড়ায়। মৃতার নাম মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ঘোষ। তাঁর এক কাকার অভিযোগ, পণের দাবিতে মীনাক্ষীকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে স্বামী চন্দন মুখোপাধ্যায় এবং মীনাক্ষীর শ্বশুর-শাশুড়ি ও দিদি-জামাইবাবুকে। চন্দন টিটাগড় থানার সিভিক ভলান্টিয়ার।

মীনাক্ষীর পরিবারের অভিযোগ, গৃহশিক্ষকতার টাকা বৌমাকে শাশুড়ির হাতে তুলে দিতে হত। নিজের স্মার্টফোনে হাত দেওয়ার অধিকারই ছিল না তাঁর। পদে পদে শুনতে হত, ''বাপের বাড়ি থেকে কত পণ দিয়েছে, যে আরাম করে সময় কাটাবে?'' বছর পঁচিশের ওই যুবতীকে নিত্য দিন এমনই গঞ্জনা সহ্য করতে হত।

এ দিন বধূর মৃত্যুর খবর জানাজানি হতে এলাকার বাসিন্দারা ওই বাড়িতে চড়াও হন। খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মীনাক্ষীর স্বামীকে। চন্দনের বাবা-মা এবং দিদি-জামাইবাবুর বিরুদ্ধেও মীনাক্ষীকে অত্যাচার করার অভিযোগ থাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদেরও।

স্থানীয় সূত্রের খবর, দেড় বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে মধ্যপাড়ারই বাসিন্দা প্রতিবেশী অমর সেনের কাছে মানুষ হন মীনাক্ষী। লেখাপড়ায় বরাবরই ভাল ছাত্রী ছিলেন তিনি। স্নাতকোত্ত‌র পাশ করার পরে, বছরখানেক আগে পাড়ারই যুবক চন্দনের সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয় তাঁর। গয়না, আসবাব, টাকা পণ হিসেবে দিতে হয়েছিল অমরবাবুকে।

অভিযোগ, বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই শুরু হয় অত্যাচার। চন্দনের বাবা চঞ্চল মুখোপাধ্যায় আগে হোমগার্ডের কাজ করতেন। প্রতিবেশীরা জানান, চঞ্চলবাবুর স্ত্রী দোর্দণ্ডপ্রতাপ অঞ্জুর কথাই ছিল বাড়িতে শেষ কথা। মীনাক্ষীর হাতে ফোন দেখলেই তাঁর উপরে অত্যাচার করা হত বলে অভিযোগ স্থানীয়দেরও।

মীনাক্ষীর পরিবারের দাবি, গৃহশিক্ষকতা করে পাওয়া পুরো টাকাটা তাঁকে শাশুড়ির হাতে তুলে তো দিতে হতই, এমনকি প্রতি মাসে বাড়ির বিদ্যুতের বিলের বড় অংশও তাঁকে দিতে বাধ্য করা হত। বলা হত, প্রয়োজনে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে। এই নিয়ে অশান্তি রাস্তা পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সম্প্রতি চন্দনের জন্য দামি মোটরবাইক কেনার টাকা বাপের বাড়ি থেকে আনতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। মীনাক্ষীর বাবার সামান্য কিছু জমি ছিল। তা-ও যাতে চন্দনের নামে লিখে দেওয়া হয়, এ জন্য অত্যাচার আরও বেড়েছিল বলে অভিযোগ।

পঞ্চায়েত সমিতির স্থানীয় সদস্য, তৃণমূলের নির্মল কর বলেন, ''আমার কাছে ওঁরা তিন বার এসেছিলেন। আমি চন্দনদের আলাদা থাকারও পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তা ওঁরা মানেননি। মীনাক্ষী আমার মেয়ের সঙ্গে একসঙ্গে বড় হয়েছে। ওকে চিনি। খুবই শান্ত স্বভাবের মেয়ে।''

এ দিন সকালে মীনাক্ষীর মৃত্যুর খবর রটে যেতেই চন্দনদের বাড়িতে চড়াও হন প্রতিবেশীরা। চন্দন সপরিবার পালানোর চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে টিটাগড় থানায় খবর দেন প্রতিবেশীরাই।