হাতকড়া পরেই খেতে হচ্ছে বন্দি ভারতীয়দের


যা চলছে, অপরাধীদের সঙ্গেও তেমনটা হয় না— ওরেগনের ফেডারেল জেল ঘুরে এমনই অভিযোগ তুলেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই জেলে বন্দি রয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী। কখনও হাতকড়া, কখনও শিকল, অপরাধীদের মতো তাঁদের পরানো হচ্ছে সবই।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানে আটকে রাখা হয়েছে তাঁদের। স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে ওরেগনের শেরিডান জেলে পঞ্জাবি অনুবাদকের কাজ করতে গিয়েছিলেন অধ্যাপক নবনীত কৌর। তিনি জানিয়েছেন, যে ভাবে ভারতীয় বন্দিদের রাখা হয়েছে, তা অকল্পনীয়। কোনও অপরাধীর সঙ্গেও এমনটা করা হয় না। তাঁর কথায়, ''মন খারাপ হয়ে যায় দেখলে। ১৮-২৪ বছরের ছেলেমেয়েরা কয়েদির পোশাক পরে ঘুরছে। ওরা তো কোনও অপরাধ করেনি। সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় চেয়েছে শুধু। ভয়ঙ্কর অবস্থা চলছে।''

৫২ জন বন্দি ভারতীয়ের মধ্যে বেশির ভাগই পঞ্জাবি। রয়েছেন কয়েক জন শিখও। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নবনীত জানতে পেরেছেন, গ্রেফতারের সময়ে শিকল পরানো হয়েছিল সবাইকে। তিনি বলেছেন, ''২৪ ঘণ্টা ওই শিকল আর হাতকড়া। খাওয়ার সময়েও খোলা হয়নি। দাগি অপরাধীদের সঙ্গেও সব সময় এমনটা করা হয় না। টানা ২২ ঘণ্টা এমন কিছু লোকের সঙ্গে একটা কুঠুরিতে রাখা হয়েছে, যাদের ভাষাই ওঁরা কেউ বোঝেন না। একেবারে অমানবিক।''

শিখ বন্দিদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ বলে জানাচ্ছেন নবনীত। তাঁদের পাগড়ি খুলে দেওয়া হয়েছে। নবনীতের মন্তব্য, ''এই দেশে প্রত্যেকের নিজস্ব ধর্মাচরণের অধিকার আছে। অথচ শিখ বন্দিদের পাগড়ি তো দূর, এক টুকরো কাপড়ও দেওয়া হচ্ছে না মাথা ঢাকার জন্য।''

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধিকর্তা ভিক্টোরিয়া বেজারানো মুইরহেড বলেছেন, ''এই পরিস্থিতি মানতে পারছেন না বন্দিরা।'' সংস্থাটি জেলে বন্দিদের অবস্থা জানতে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষের কাছে। তাঁরা আইনি সাহায্য করছেন কোনও কোনও বন্দিকে। বন্দিদের কেউ কেউ নিজেই এখন আইনজীবী ঠিক করছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হস্তক্ষেপের পরে অবস্থা কিছুটা বদলেছে। বন্দিদের ফোন করতেও দেওয়া হচ্ছে। মুইরহেড সব দেখেশুনে বলেছেন, ''আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে যে ব্যবহার করছে আমেরিকা, তাতে আমি স্তম্ভিত।'' তবে তিনি মনে করছেন, ''এখন বিষয়টা নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেও পরিস্থিতি খুব অন্য রকম ছিল না।'' অভিবাসীদল আটক, গণ-প্রত্যর্পণ সবই ছিল। কিন্তু মুইরহেডের মতে, ''ট্রাম্প আসার পরে অভিবাসন সমস্যা অন্য মাত্রা নিয়েছে। আটক আগেও হত। ট্রাম্প বলেছেন, অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটক করে রাখো। এটাই চিন্তার।''

সান ফ্রান্সিসকোয় ভারতীয় দূতাবাস সম্প্রতি কর্মীদের পাঠিয়েছিল বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু ভারত সরকার তাদের ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দিলেও তাঁরা রাজি হয়েছেন কি না স্পষ্ট নয়।