মোদির সভা : প্যান্ডেল ভেঙে পড়ায় অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার মামলা রুজু


মেদিনীপুর : কৃষককল্যাণ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভা চলাকালীন দুর্ঘটনা ঘটে। ভেঙে পড়ে লোহার কাঠামো। এই ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। আঘাত ও গুরুতর আঘাতের মামলাও রুজু করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আয়োজক, প্যান্ডেল তৈরির ঠিকাদার ও ডেকরেটর্সের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

ঘটনার দায় রাজ্য পুলিশের উপর চাপিয়েছেন BJP-র রাজ্যস্তরের নেতারা। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই প্রধানমন্ত্রীর সভায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা চলাকালীন অনেকেই ওই কাঠামোর উপর উঠে পড়েন। তার জেরেই ভেঙে পড়ে কাঠামোটি। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও, তাদের ভূমিকা কার্যত নীরব দর্শকের মতো ছিল বলে দাবি BJP-র জেলা সভাপতি সমীক দাসের। BJP নেতা সায়ন্তন বসুও পুরো ঘটনার দায় জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের উপরই চাপিয়েছেন। 

যদিও এই ঘটনার জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়ি কারা, তা জানতে গতকালই মেদিনীপুরের সার্কিট হাউজ়ে যায় কেন্দ্রীয় সরকারের তিন সদস্যের একটি দল। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব আরতি ভাটনগর। অন্য দুই সদস্য হলেন AIG ও SPG-র দুই আধিকারিক এস কে সিনহা এবং সুনীল সিন্ধে। 

বৈঠকের পর সার্কিট হাউজ় থেকে বেরিয়ে BJP-র জেলা সভাপতি শমীক দাস বলেন, "এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসাররা এসেছেন। তাঁরা আলাদা আলাদাভাবে পুলিশ, প্রশাসন এবং অর্গানাইজ়ার সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আমাদের সমস্ত বিষয় জানিয়েছি। পুলিশ, প্রশাসনের কাছ থেকে সেভাবে সহযোগিতা পাইনি। বেশিরভাগ সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে সমস্ত কাজ করানো হয়েছে। অতিরিক্ত ভিড়ের জন্য সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ VVIP গেটটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। ওই গেট দিয়ে সাধারণ মানুষ ঢুকে প্যান্ডেলের উপরে চড়তে শুরু করেছিল। বারবার বলা সত্ত্বেও লোকজনকে সেখান থেকে নামানোর জন্য কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। সেই সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সভার আগে পুলিশ, প্রশাসন একবারও বৈঠক করেনি। অথচ ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর যখন আমরা আহতদের উদ্ধার করছিলাম, তখন পুলিশ কোনও প্ররোচনা ছাড়া লাঠিচার্জ করল। আমাদের যারা আহত হয়েছে, সেই সংখ্যাটা ৩০ জনের মধ্যে ছিল। কিন্তু পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে আরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এই সমস্ত বিষয় আমরা তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছি। এত বড় অনুষ্ঠানের আগে পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের সঙ্গে একবারও বৈঠক করেনি। শুধুমাত্র একবারই SPG ও ASL মিটিং করেছিলেন। একথাও আমরা জানিয়েছি।" 

তিনি আরও বলেন, "প্যান্ডেল তৈরির জন্য ডেকরেটর ঠিক করা হয়েছিল রাজ্য (নেতৃত্ব) থেকে। কারণ এই পরিকাঠামো মেদিনীপুরের কোনও ডেকরেটরের ছিল না। এর দায়িত্বে ছিলেন দলের সাধরণ সম্পাদক রাজু ব্যানার্জি এবং সহ সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি।"

গতরাত সাড়ে নটা নাগাদ সার্কিট হাউজ়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তিন সদস্যের তদন্তকারী দলের সঙ্গে দফায় দফায় প্রায় ৬ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে ডাকা হয়েছিল আয়োজক অর্থাৎ BJP-র রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে। তলব করা হয়েছিল জেলা পুলিশ, প্রশাসন, পূর্তদপ্তর, অগ্নি নির্বাপণ দপ্তরের আধিকারিকদের। সকলের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে চলে বৈঠক। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের এই তদন্তকারী দলের আধিকারিকরা সকলের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। প্রধানমন্ত্রীর সভায় যে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল তা কতটা নিরাপদ ছিল? মঞ্চ নির্মাণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল, তা কতটা উপযুক্ত ছিল? সেগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল কি না? মঞ্চ তৈরির সময় সেখানে পূর্তদপ্তরের কোনও আধিকারিক ছিলেন কি না? মঞ্চ নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আয়োজকদের আলোচনা হয়েছিল কি না? এই সমস্ত বিষয়গুলি জানতে চান তদন্তকারী আধিকারিকরা। যদিও এই বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সকলেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা বৈঠকের পর তদন্তকারী দল তদন্তের কোন স্তরে পৌঁছেছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।