নেট গুজবে হিংসার পিছনে কি চক্রান্ত


বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে সমাজকে জুড়ছে মোবাইল ও ইন্টারনেট। সমাজকে টুকরো-টুকরো করার হাতিয়ারও হচ্ছে এ দু'টি! এদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে বিদ্বেষ, হিংসা। আমেরিকায় গত নির্বাচনের আগে এমনটা ঘটেছিল। অভিযোগ, ফেসবুকের মাধ্যমে। যা নিয়ে তদন্তও চলছে সে দেশে। ভারতেও নেট-গুজব উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে। ছড়িয়ে পড়ছে গুজব, ভুল বার্তা, প্ররোচণামূলক ছবি ও খবর। নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অসম— উপকারী বন্ধু মোবাইল ও ইন্টারনেট এখন গোটা উত্তর-পূর্বেরই বড় মাথাব্যথা। এর পিছনে চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগও এসেছে অসম পুলিশের কাছে।

কী সেই চক্রান্ত? অসম পুলিশের বিশেষ ডিজিপি (বিশেষ শাখা) পল্লব ভট্টাচার্যের মতে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই ধরনের বার্তা ছড়ানো হতে পারে। এমনও হতে পারে যে, নাগরিকপঞ্জি নবীকরণের চূড়ান্ত দিন এগিয়ে আসার মুখে নিরাপত্তাবাহিনী ও প্রশাসনকে অন্যত্র ব্যস্ত করে তোলার চক্রান্ত চলছে। সমস্যা হল,এ সব বার্তার উৎস বার করা খুবই কঠিন।

অসম পুলিশের সাইবার সেলের মতে, জনজাতি ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অনগ্রসর এলাকায় ইংরেজি বার্তার সত্য-মিথ্যা ধরতে পারার মতো মানুষ কম। কিন্তু উত্তেজক ছবি ও স্থানীয় ভাষার বার্তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে। কখনও খেলার ছলে, কখনও বিশেষ উদ্দেশ্যে উস্কানি ছড়ানো হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে।

মণিপুরিদের হুমকি দেওয়ার ভিডিয়ো সম্প্রতি ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে মণিপুরে। খুন হচ্ছেন মানুষ। মোবাইলে ছড়িয়ে পড়া গুজবের জেরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছি শিলং। নাগাল্যান্ডে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয় মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে। নিপা ভাইরাসের উড়ো খবরে মেঘালয়ের উইলিয়ামনগরে ও অসমের নলবাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা পড়েন বিপাকে। গত বছর অসমে রটে জাপানি এনসেফেলাইটিসের টিকা নিলে সন্তানধারণ ক্ষমতা নষ্ট হয়। এতে টিকা দেওয়ার কর্মীদের দেখলেই স্কুল ফাঁকা হয়ে যেত। অসমে এখন ছেলেধরার আতঙ্ক। তারই বলি হন দুই যুবক।

কী ভাবে রোখা যাবে এ সব? বহু ক্ষেত্রেই মোবাইল ও ইন্টারনেট সাময়িক বন্ধ রাখা হচ্ছে। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান নয়। কেন্দ্র তাই বার্তার উৎসসন্ধান করা যায়, এমন সফ‌্‌টওয়্যার তৈরির কাজ চালাচ্ছে। ভুয়ো খবর ও 'ফরোয়ার্ড' করা বার্তায় রাশ টানতে নতুন ফিচার আনার চেষ্টায় আছে হোয়াটসঅ্যাপ। এটির পরীক্ষামূলক (বিটা) সংস্করণে অন্যের পাঠানো বার্তা কাউকে পাঠালে বার্তার উপরে লেখা থাকছে 'ফরোয়ার্ডেড'।