অনশনে ইতি মেডিক্যাল কলেজে, সমাধানের রাস্তা মিলল ১৪ দিনে


ইচ্ছাপূরণ: দাবি আদায়ের পরে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে পড়ুয়াদের উল্লাস। সোমবার।

মেডিক্যাল কলেজ প্রশাসন মচকাল, কিন্তু ভাঙল না!

পড়ুয়াদের অনশনের ১৪তম দিনে হস্টেল জট নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছে অবশেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানালেন, পুরনো হস্টেল সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত পড়ুয়াদের নতুন হস্টেলে থাকতে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তকে 'নৈতিক জয়' বলে দাবি করে অনশন তুলে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

সোমবার সকালে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে এই সমাধানসূত্র বেরোয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অশোক ভদ্র অনশনকারীদের জল খাওয়ান। কিন্তু এমন একটি সহজ সমাধানে পৌঁছতে কেন এত দিন লাগল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও জবাব মেলেনি। তবে এ দিনই স্বাস্থ্য প্রশাসনে বড় রদবদল হয়েছে। সরেছেন স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। অন্য দিকে, সমাধানসূত্র বেরনোর সঙ্গে সঙ্গে এসএসকেএম থেকে ছুটি পেলেন অনশন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্র। তিনি মেডিক্যালেই কাজে যোগ দেবেন বলে খবর।

সমাধানসূত্র

• ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের হস্টেল আবেদনকারীদের স্বচ্ছ হস্টেল কাউন্সেলিং করে সাময়িক ব্যবস্থা করা হবে।

• ইডেন হসপিটাল রোডে নতুন হস্টেল তৈরি করা হলে পড়ুয়ারা নবনির্মিত হস্টেলে চলে যাবেন।

• সমস্ত হস্টেলের পুনর্নির্মাণের দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

• স্বচ্ছতার সঙ্গে হস্টেলের সুপার নিযুক্ত করা হবে।

সমাধানসূত্র জানিয়ে এ দিন দুপুরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন অশোক ভদ্র। তাতে বলা হয়, ইডেন হসপিটাল রোডে পুরনো হস্টেল সারানোর কাজ অবিলম্বে শুরু হবে। তত দিন নতুন হস্টেলের দু'টি তলা বরাদ্দ হল দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য। ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ কাউন্সেলিং দাবিও মেনে নেওয়া হয়। প্রশাসনের শীর্ষ মহলের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্তের বিষয়ের আগে নবান্নের কাছে কোনও খবর ছিল না। যদিও এই সমাধানসূত্র বড় জটিলতার অবসান ঘটাল বলেই অনেকের অভিমত।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে মৃণ্ময় সরকার বলেন, ''কর্তৃপক্ষ যে আশ্বাস দিয়েছেন তার অন্যথা হলে আবার আন্দোলন হবে।'' হস্টেল থাকার অযোগ্য বলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই আন্দোলন করছিলেন এমবিবিএস-এর তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ারা। অভিযোগ উঠেছিল, হস্টেল বরাদ্দের জন্য কাউন্সেলিংয়ের স্বচ্ছতা নিয়েও। যার ফলে লিখিত ভাবে ঘর বরাদ্দ হচ্ছিল না। সবই চলছিল মৌখিক প্রক্রিয়ায়। পাশাপাশি, কর্তৃপক্ষ নতুন হস্টেলে জায়গা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে শুধু প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারাই জায়গা পান।



এই জয় শিক্ষার। কর্তৃপক্ষ যে শেষ পর্যন্ত ছেলেদের সমস্যা বুঝতে পেরেছেন, সেটাই ভাল লাগছে। আরও বড় বিপদ থেকে ওরা রক্ষা পেল। বললেন দেবাশিস বর্মনের মা ললিতা রায় সরকার।

প্রাথমিক আন্দোলনে কাজ না হওয়ায় শুরু হয় অবস্থান বিক্ষোভ। অভিযোগ, ৯ জুলাই রাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। ১০ জুলাই থেকে অনশনে বসেন ৬ পড়ুয়া। পরে যোগ দেন আরও ১৫ জন। অনশনে চার জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। দু'জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। অভিযোগ, তার পরেও 'মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া'-র র‌্যাগিং নীতি দেখিয়ে ছাত্রদের দাবি মানা হচ্ছিল না। এই অবস্থায় কলেজের প্রাক্তনী থেকে বিদ্বজ্জনদের একাংশ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান। শঙ্খ ঘোষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়রা বিবৃতি দেন। কলেজ চত্বরে কনভেনশন হয়। রাজনীতিকরাও আসরে নামেন। সক্রিয় হয়ে ওঠে সিপিএম, কংগ্রেস। শেষ বেলায় দু'-একজন বিজেপি নেতাকেও ধারে কাছে দেখা যায়।

অনেকের মতে, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির সূত্রপাত ঘটান তৃণমূল নেতা নির্মল মাজি। আন্দোলনকারীদের তিনি 'মাওবাদী' আখ্যা দেন। এ দিনও তাঁর মন্তব্য, ''অনশন করার প্রয়োজন ছিল না। ওরা আবেগে চলে।''

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ''এত দিন মেডিক্যালে উন্নয়ন দাঁড়িয়েছিল, তাই আন্দোলনও চলছিল।'' বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ''সরকারের আর কোনও রাস্তা নেই, তাই সব দাবিই মেনে নেওয়া হচ্ছে।'' কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান বলেন, ''মমতাও তো গণ আন্দোলনের নেত্রী। ছাত্রদের প্রতি আরেকটু সহানুভূতি দেখাতে পারতেন।'' সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ''এক ঘণ্টায় যে সমস্যার সমাধান হয়, তার জন্য ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হল!''