এটিএমে ঢুকে বিপাকে প্রতারক, পাকড়াও কোটি টাকার প্রতারণার পাণ্ডা



তিনি অবসরপ্রাপ্ত পুলি‌শকর্তা। ঠগ জোচ্চোরদের ভালই চেনেন।

মাসখানেক আগে যখন তাঁর কাছে বিমা কোম্পানির ফোন আসে তখন তিনি কোনও কিছু সন্দেহ করেননি। বিমা কোম্পানি থেকে ফোনে তাঁকে বলা হয়েছিল, তাঁর প্রিমিয়ামের টাকা তিনি নির্দিষ্ট সময়ের আগে দিলে তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে।

নর্দার্ন পার্কের বাসিন্দা পুলিশকর্তা চন্দ্রকান্ত দাস মহাপাত্র সন্দেহ করেননি, কারণ যারা ফোন করেছিল তারা প্রিমিয়ামের টাকার অঙ্ক একদম সঠিক বলেছিল। তারা প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার শেষ তারিখও ঠিকঠাক বলেছিল। আর সেই কারণেই ফোনে বলা অ্যাকাউন্ট নম্বরে দু'টি বিমার প্রিমিয়ামের চার লাখ টাকা কোনও দ্বিধা ছাড়াই ট্রান্সফার করে দেন। তার পরই জানতে পারেন, গোটাটাই প্রতারণা যখন বিমা কোম্পানি জানিয়ে দেয় তারা কোনও টাকা পায়নি।

পুলিশকর্তা বাঁশদ্রোণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই তদন্তে নেমেই চক্রের পাণ্ডা ২১ বছরের মণীশ চিত্রাংসকে গ্রেফতার করে বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ। আর সেখান থেকেই জানা যায়, গত দু'বছরে এই ভাবে কমপক্ষে এক কোটি টাকা প্রতারণা করেছে মণীশ।

কী ভাবে প্রতারণা?
জেরায় জানা যায়, দু'বছর আগে ওই বেসরকারি বিমা কোম্পানির কর্মী ছিল মণীশ। চাকরি চলে যাওয়ার পরও সঙ্গে থেকে গিয়েছিল বিমা কোম্পানির ডেটাবেস যেখানে লেখা ছিল গ্রাহকদের বিমা-প্রিমিয়াম সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। আর সেই ডেটাবেস ব্যবহার করেই মোটা টাকা যে গ্রাহকদের প্রিমিয়াম তাঁদের টার্গেট করত মণীশের চক্র। যদিও পুলিশের পক্ষে মণীশের হদিশ পাওয়াটা খুব সহজ হয়নি।

কী ভাবে পাকড়াও?


গাজিয়াবাদে কলকাতা পুলিশের জালে অভিযুক্ত

তদন্তের শুরুতে পুলিশের হাতে তথ্য বলতে দু'টি জিনিস। প্রতারকদের মোবাইল নম্বর আর যে অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে তার নম্বর। এক তদন্তকারী বলেন, "ফোন নম্বর আর অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে বোঝা যাচ্ছিল, উত্তর-পূর্ব দিল্লির আশপাশে কোথাও। কিন্তু সিমকার্ড নেওয়া হয়েছিল ভুয়ো নথি দিয়ে। তাই ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছিল না।" শেষ পর্যন্ত হঠাৎই তদন্তকারীরা দেখেন, একটি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের লোনি এলাকার এটিএম থেকে। সেই এটিএম-এ পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে চিহ্নিত করা হয় মণীশকে। আর সেই ছবি নিয়ে খোঁজ করতে করতে হদিশ মেলে তার ডেরার।

তদন্তকারীদের দাবি, এই চক্রে আরও অনেকে আছে। শুধু এ রাজ্য নয়, তামিলনাড়ু, অসম, ত্রিপুরার বাসিন্দাদেরও একই ভাবে প্রতারণা করেছে।