মোদীর সভায় আহতদের এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ মমতার


পরিদর্শন: নরেন্দ্র মোদীর সভার দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুর্ঘটনার পরে আহতদের দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর রাজ্য বিজেপি-র নেতারা দাবি করেছিলেন, বার বার ফোন করে আহতদের শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, সব রকম সাহায্যের আয়োজন করতে বলেছেন।
তার পর কেটে গিয়েছে তিন দিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুনতে হল অনুযোগ। মোদীর সভায় মঞ্চের ছাউনি ভেঙে জখমদের মধ্যে যে দু'জন এখনও সেখানে ভর্তি আছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে বললেন, ''চিকিৎসা হচ্ছে। তবে সাহায্য কিছু পাইনি।'' পরে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালেও জখম কয়েক জনকে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। এর পরই ত্রাণ তহবিল থেকে জখমদের অর্থসাহায্যের কথা ঘোষণা করেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ৩ জনকে এক লক্ষ টাকা করে সাহায্য দেওয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আরও ৪ জনকে দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা করে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচও দেবে রাজ্য সরকার। মমতার কথায়, "প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছি। আহতরা কিছু সাহায্য পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। ওঁরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত। ৫ জনকে ত্রাণ তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা করে দেব। আরও ৪ জন আছেন, যাঁদের অল্প লেগেছে, তাঁদের ৫০ হাজার টাকা করে দেব।" প্রধানমন্ত্রীর সভার দিন বিজেপি কর্মীদের মারধরে জখম এক পুলিশকর্মী কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনিও সাহায্য পাবেন। মমতার কথায়, "কলকাতায় পুলিশের এক জন ভর্তি রয়েছেন। তাঁকেও এক লক্ষ টাকা দেব।"

আজ, শুক্রবার খড়্গপুর আইআইটি-র সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর খড়্গপুর পৌঁছনোর কথা ছিল। তবে তার আগে বিকেল পাঁচটা নাগাদ মমতা পৌঁছে যান মেদিনীপুর মেডিক্যালে। পরে যান শহরের রবীন্দ্রনগরে বেসরকারি হাসপাতালে। মমতার এই হাসপাতাল পরিদর্শনের পিছনে রাজনীতির বার্তা রয়েছে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। কারণ, খোদ প্রধানমন্ত্রী এই হাসপাতালে এসেছেন, সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ দিন মেডিক্যালে জখমদের মমতা জিজ্ঞাসা করেন, ''শরীর কেমন আছে? সাহায্য পেয়েছেন কি?''

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে ছাউনি ভেঙে জখম ৯৩ জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে অনেকে ছুটি নিয়ে চলে যান, অনেকে গিয়ে ভর্তি হন বেসরকারি হাসপাতালে। এখন মেদিনীপুরে মোট ৯ জন চিকিত্সাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে মেডিক্যালে ২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৭ জন।

মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য ঘোষণায় খুশি আহতেরা। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি লালগড়ের বেলাটিকরির কৌশিক মাহাতোর কথায়, "কলেজে পড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্যটা পেলে ভাল হয়।" আরেক জখম গোয়ালতোড়ের শেকাশোলের সুমিত্রা মাহাতো বলেন, "এখনও কোনও সাহায্য পাইনি। মুখ্যমন্ত্রী সাহায্য দেবেন বলে গেলেন। ভাল লাগছে।" বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি শালবনির বিষ্ণুপুরের তারাপদ মাহাতোরও বক্তব্য, "মুখ্যমন্ত্রী এসে দেখা করায় ভাল লাগছে।"

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ নিয়ে যথারীতি রাজনীতির খোঁচা দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ''প্রধানমন্ত্রী গিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকেও যেতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার ভুলে যাবেন না তো!''

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার পাল্টা বক্তব্য, ''কে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলে যান তার প্রমাণ তো হাসপাতালের বেডে শোয়া আহতরাই শুনিয়ে দিয়েছেন।''