চাবুক হাতে থাকাই যথেষ্ট নয়


আর কত বার! উন্নাওয়ের নামটা আর কত বার এই জঘন্য কারণে শিরোনামে উঠে আসবে? এই জঘন্য বিষটাই বা আর কতবার এমন দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দেবে? যেন অনন্ত অন্ধকার এক, যেন শেষ দেখা যায় না।

ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। এক মহিলাকে টানতে টানতে জঙ্গলে নিয়ে যাচ্ছে তিন যুবক। মোবাইলে ভিডিয়ো করে রাখছে আর এক জন। আকুল আর্তি মহিলার— ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও। অবিচলিত দুষ্কৃতীদের হুমকি— চিৎকার করলেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়বে টিভিতে।

টিভি-তে না হোক, ইন্টারনেটে শেষ পর্যন্ত ছড়িয়েই পড়ল সে ভয়ঙ্কর দৃশ্যের ভিডিয়ো। চার জনের মধ্যে দু'জনকে গ্রেফতারও করল পুলিশ, শুরু হল তদন্ত, শুরু হল বাকি দু'জনের খোঁজও। কিন্তু অসীম লজ্জা কি তাতে বিন্দুমাত্র কমে?

তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন বিধায়ক, প্রথমে এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শিরোনামে এল উন্নাও। সেই তোলপাড়ের মাঝেই ন'বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের পর রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, এই উন্নাওতেই। এ বার এক দল যুবক বেপরোয়া, অবিচলিত ভঙ্গিতে জঙ্গলে টেনে নিয়ে গেল এক মহিলাকে, চলল শ্লীলতাহানি,হল ভিডিয়ো রেকর্ডিং। প্রশাসনিক ব্যর্থতা কোথায় পৌঁছলে একই এলাকায় উপর্যুপরি এই রকম ঘটনা ঘটতে পারে!

উত্তরপ্রদেশের এই জনপদটি থেকে পর পর সামনে এল জঘন্য অভিযোগগুলো। তার মানে দেশের অন্য সব প্রান্ত এই বীভৎসতা থেকে মুক্ত, তা কিন্তু নয়। প্রায় রোজ দেশের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে নারীর উপর জঘন্য নির্যাতনের অভিযোগ সামনে আসছে। এই বীভৎসতার প্রতিবাদে বার বার তোলপাড় হয়ে গিয়েছে গোটা দেশ। কখনও নির্ভয়া কাণ্ড, কখনও কাঠুয়া কাণ্ড, কখনও মন্দসৌর কাণ্ড, কখনও উন্নাও কাণ্ড। উত্তাল হয়েছে বিক্ষোভ। ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি রুখতে কঠোর হয়েছে আইন। কিন্তু তাতেও রাশ টানা যায়নি অপরাধে। লজ্জার শেষ নেই!

আইন কঠোর হওয়া সত্ত্বেও অপরাধ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না কেন? প্রশ্ন কিন্তু অত্যন্ত গুরুতর। উত্তর খুঁজতে গেলে প্রশ্ন উঠে যায় প্রশাসনিক সদিচ্ছা অথবা দক্ষতা অথবা তৎপরতা নিয়ে। আইন তো কঠোর হল, কিন্তু তার প্রয়োগ কি ঠিক মতো হচ্ছে? হচ্ছে না সম্ভবত। হলে এ ধরনের অপরাধ না কমার কোনও কারণ থাকতে পারে না।

এই জঘন্য প্রবণতার হাত থেকে এবং এই অসীম লজ্জার হাত থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে। যে কোনও মূল্যে মুক্তি পেতে হবে। তার জন্য শুধু আইন বদলানো যথেষ্ট নয়। প্রশাসনকে তার কার্যপদ্ধতিও বদলাতে হবে। সতর্ক নজরদারি দরকার। অত্যন্ত তৎপর এক প্রতিরোধ পরিকাঠামো দরকার, অপরাধের আভাস মাত্র পেলেই যা সক্রিয় হতে পারবে। অপরাধ যদি তাতেও ঘটে, তা হলে অপরাধীর দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। প্রত্যেকটি অপরাধপ্রবণ মানসিকতায় আতঙ্কের বীজ বপন করে দেওয়া দরকার। অপরাধের প্রবণতা মাথাচাড়া দিলেই আতঙ্কের বীজটাও যাতে নিমেষে মহীরূহে পরিণত হতে পারে মনের মধ্যে, তা সুনিশ্চিত করা দরকার। এ ছাড়া মুক্তির আর কোনও পথ নেই।