লোকসভায় নজিরবিহীন ঘটনা।

সংসদে অনাস্থা: আপনি আমায় পাপ্পু বলে গাল দিতে পারেন, কিন্তু আমার মনে আপনার প্রতি কোনও ঘৃণা নেই, বললেন রাহুল, হেঁটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন মোদীকে


নয়াদিল্লি: লোকসভায় নজিরবিহীন ঘটনা। অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর বিতর্কে বক্তব্য পেশ করে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নানা ইস্যুতে আক্রমণ করার পর অপ্রত্যাশিত ভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সৌজন্য দেখালেন রাহুল গাঁধী। বললেন, আপনাদের মনে আমার প্রতি ঘৃণা আছে। আপনি আমায় পাপ্পু বলতে পারেন, আরও অনেক গালাগাল করেও ডাকতে পারেন, কিন্তু আমার ভিতরে আপনার সম্পর্কে কোনও ঘৃণা, বিদ্বেষ নেই। এ কথা বলেন সোজা হেঁটে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করেন তিনি।

# ছিল ৫২০ কোটি টাকার ডিল, হঠাত্ লাফিয়ে বেড়ে হয়ে গেল ১৬০০ কোটি টাকার ডিল। রাফালে ডিল নিয়ে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খোঁচা রাহুলের।
# প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, রাফালে ডিল নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তি রয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। জানতে চেয়েছি, সত্যিই এমন কোনও চুক্তি আছে কিনা। তিনি বলেছেন, এমন কিছুই নেই। আসলে প্রধানমন্ত্রীর চাপে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাফালে নিয়ে মিথ্যা বলেছেন। দাবি রাহুলের।

# সবাই বোঝেন, দেখতেও পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর মার্কেটিংয়ের পিছনে কী বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালা হচ্ছে। বললেন রাহুল।

# অন্ধ্রপ্রদেশ রাজনীতির শিকার। বললেন রাহুল গাঁধী।
# মোদী যুবকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিপালন করেননি, অভিযোগ করলেন কংগ্রেস সভাপতি।
# জানি না প্রধানমন্ত্রীর কাছে কী এমন তথ্য ছিল যে তিনি নোটবন্দি চালু করে দিলেন। আজ দেশের সকলে সমস্যায় পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর জুমলা (অত্যাচার) য় যুবক, কৃষক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
# ১৫ লক্ষ টাকা দেশবাসীর প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে এনে দেওয়া, কর্মসংস্থানের ঘোষণা, সবই ছিল জু্মলা। প্রধানমন্ত্রীর কথার একটা গুরুত্ব থাকা উচিত।

# ২০২২-এর মধ্যে সব দরিদ্র পাকা বাড়ি পাবেন, মন্তব্য রাকেশ সিংহের। শৌচাগার শব্দেই কংগ্রেসের আপত্তি, বললেন তিনি।

#কংগ্রেস সহ্য করতে পারে না, তারা ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় এসেছে। সরকারপক্ষের হয়ে বক্তব্য রাখা শুরু করলেন বিজেপির রাকেশ সিংহ। তাঁর বক্তব্য, ইউপিএ আমলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন, দেশের সম্পদে প্রথম অধিকার সংখ্যালঘুদের। প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, সম্পদে প্রথম অধিকার দরিদ্রদের।

#অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর বিতর্ক সূচনা করলেন টিডিপির জয়দেব গল্লা। অন্ধ্রকে বিশেষ প্যাকেজ দেওয়ার প্রস্তাব কেন্দ্র মানেনি  বলে তাঁর অভিযোগ। গুজরাতে সর্দার প্যাটেলের মূর্তি তৈরিতে যা খরচ হচ্ছে, তার থেকেও কম অর্থ বরাদ্দ হয়েছে অন্ধ্রের রাজধানী অমরাবতীর জন্য।

#বিজু জনতা দল ওরফে বিজেডিও ভোটাভুটিতে যোগ দেবে না, তারা কক্ষত্যাগ করল।

১৮ সাংসদের শিবসেনা জানিয়ে দিল তারা ভোটাভুটিতে অংশ নেবে না। অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটের সময় গরহাজির থাকবে তারা। খানিকক্ষণের মধ্যেই সংসদে পেশ হবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব। সঙ্গে সঙ্গেই হবে প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি। তবে সংখ্যার হিসেবে পরিষ্কার, মোদী সরকারের সামনে কোনও বিপদ নেই। যদিও সবথেকে পুরো সঙ্গী শিবসেনা এভাবে মুখ ফেরানো তাদের কাছে নিঃসন্দেহে সুখবর নয়, যদিও সেনা স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা সরকারে থাকবে ।

শিবসেনার সাংসদরা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বারবার আলাদা আলাদা বক্তব্য রেখেছেন। আজই সেনা মুখপত্র সামনায় মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। ভোটের অল্প কিছু আগে তারা জানায়, ২০১৪-য় সরকার জনতাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা এখনও রাখেনি। তাই ভোটে যোগ দেবে না তারা।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে টুইট করে বলেছেন, আজ দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমি নিশ্চিত, আমার সাংসদ সহকর্মীরা যাতে গঠনমূলক ও বাধাহীনভাবে বিতর্ক চলে, সেই পরিস্থিতি তৈরি করবেন। এটি জনগণ ও সংবিধান প্রণেতাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য। ভারত আজ আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে দৃষ্টি রাখবে।


মোদী সরকার জানিয়েছে, অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হতে তারা তৈরি, অনায়াসে পরাজিত করা হবে এই প্রস্তাবকে। উল্টোদিকে বিরোধীরাও এক চুল জমি ছাড়তে রাজি নয়, পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে তারাও। বেলা ১১টা থেকে লোকসভায় শুরু হবে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আলোচনা। এ জন্য সময় বরাদ্দ হয়েছে ৭ ঘণ্টা। তারপর ভোটাভুটি। বিতর্ক শুরু করবেন অনাস্থা প্রস্তাব আনা টিডিপি-র অন্ধ্রের গুন্টুরের সাংসদ জয়দেব গল্লা। বিজেপির হয়ে প্রধানমন্ত্রী সহ সব নেতা বিতর্কে অংশ নেবেন।

জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের বক্তব্য তুলে ধরবেন দলীয় সভাপতি রাহুল গাঁধী। শিবসেনা, বিজেডি, টিআরএস এখনও স্পষ্ট করেনি, তারা কাদের সঙ্গে থাকবে। ৩৭ সাংসদের এডিএমকে অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে, সরকারের হয়ে ভোট দেবে তারা। পাশাপাশি বিজেপির বিদ্রোহী সাংসদরাও এই ভোটাভুটিতে দলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। গত ৪ বছরে বারবার মোদী সরকারের বিরোধিতা করা শত্রুঘ্ন সিংহ জানিয়েছেন, সরকারের হয়েই ভোট দেবেন তিনি। একইভাবে দলের বিরুদ্ধে একাধিকবার সরব হওয়া সাংসদ সাবিত্রীবাঈ ফুলেও জানিয়েছেন, ভোট দেবেন অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে।

লোকসভায় ৫৪৩টি আসনের মধ্যে এই মুহূর্তে ৯টি ফাঁকা। ৫৩৪ আসন বিশিষ্ট লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তাই ২৬৮টি আসন। বিজেপির কাছে নিজেদের সাংসদ সংখ্যাই ২৭২। বাকি এনডিএ শরিকদের পাশে পেলে নিম্ন কক্ষে তাদের শক্তি ৩১২ হয়ে যায়, অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সংখ্যার থেকে ৪৪ বেশি। এবার এডিএমকের ৩৭ জন সাংসদও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে সরকারপক্ষের সংখ্যা ৩৯৪-এ পৌঁছে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার, মোদী সরকার পড়ে যাওয়ার আজ কার্যত কোনও সম্ভাবনা নেই।

এবার দেখে নেওয়া যাক বিরোধীদের সংখ্যা। ইউপিএ ৬৭, তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪, বিজেডি ২০, টিডিপি ১৬, টিআরএস ১১, অন্যান্য ৩০। সব মিলিয়ে ১৭৮। এডিএমকে প্রথমেই বিরোধী জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, টিআরএস, বিজেডি যে তাদের ভোট দেবে তাও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।