পেটে ভাত থাকলে তবেই বৃদ্ধি ১০%, বললেন নীতি আয়োগের সিইও


খানিকটা যেন ভূতের মুখে রামনাম!

সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত না হলে যে ১০% বৃদ্ধির কক্ষপথে পৌঁছনো অসম্ভব, তা এই প্রথম স্পষ্ট ভাবে বলা হল নরেন্দ্র মোদীর জমানায়। সরকারের মেয়াদ চার বছর পেরোনোর পরে। কার্যত ভোটের মুখে এসে।

শনিবার নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত বলেন, ''মানব উন্নয়ন সূচকের উন্নতি না হলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ১০ শতাংশে টেনে তোলা সম্ভব নয়।''

এমনিতে এই তত্ত্বের মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। বহু দিন ধরে এই কথাই নাগাড়ে বলে আসছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। বরাবর তাঁর যুক্তি, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো একেবারে প্রাথমিক বিষয়গুলিতে নজর না দিলে, অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগে না। কারণ, যে দেশে শিশু পুষ্টির অভাবে ভোগে কিংবা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ ঠিকমতো পায় না, সেখানে অর্থনীতির উন্নতি কী ভাবে সম্ভব? কী ভাবে বাড়বে উৎপাদনশীলতা? সেই কারণেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে জোর দিয়েছেন তিনি।

গরিবের সরকার হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা গত চার বছরে যে নরেন্দ্র মোদীরা করেননি, এমন নয়। কিন্তু সম্প্রতি অমর্ত্য যখন বলেন যে, বৃদ্ধিতে দ্রুততম হয়েও দেশ পিছনের দিকে যাচ্ছে, তখন তার প্রবল সমালোচনা করেছে বিজেপি। কড়া সমালোচনা করেন নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমারও।

বৃদ্ধি আর উন্নয়ন নিয়ে অমর্ত্যের তর্ক আর এক অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভগবতীর সঙ্গেও। যিনি মোদীর গুজরাত মডেলের সমর্থক। দেশের উন্নতির জন্য  বৃদ্ধিকেই পাখির চোখ করার পক্ষপাতী। বিশ্বাস করেন সমাজের নিচু তলা পর্যন্ত তা চুঁইয়ে নামায়। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরেই এ দিন কান্ত বলেন, ''লক্ষ্য যদি হয় ১০ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি, তবে মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে উন্নতি না হলে তা সম্ভব নয়।'' বলেছেন সদ্যোজাত শিশু মৃত্যুর হার ও মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার বেশি থাকা এবং শিশুর বৃদ্ধি অপুষ্টিতে বাধা পাওয়ার কথাও। মেনেছেন, এ সবে উন্নতি না হলে ১০% বৃদ্ধি সম্ভব নয়।

২০১৬-র মানব উন্নয়ন সূচকে ভারত ১৮৮টি দেশের মধ্যে ১৩১ নম্বরে। ক্ষুধা সূচকে ১০০-তম। কংগ্রেস মুখপাত্র শক্তিসিংহ গোহিলের দাবি, গুজরাত মডেলের গলদ বোঝা যাচ্ছে। সেই ভুল বুঝেই এখন ভোটের মুখে মানব উন্নয়নের জয়গান? নীতি আয়োগ অবশ্য তা মানতে নারাজ।