ঘৃণামেশানো অপরাধ: একে উত্তরপ্রদেশ, দুইয়ে গুজরাত, তিনে রাজস্থান


ধর্ম-বর্ণ-জাতপাতের ঘৃণা বা বিদ্বেষজনিত অপরাধে শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। দুই এবং তিন নম্বর স্থানেও রয়েছে বিজেপি শাসিত আরও দুই রাজ্য, গুজরাত এবং রাজস্থান। এমনটাই বলছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদ্যপ্রকাশিত রিপোর্ট।

এ দেশে ওই সংস্থার শাখার তৈরি করা এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিদ্বেষজনিত অপরাধের শিকার হয়েছেন দেশের অসংখ্য দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন বা রূপান্তরকামীরা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ৬৭ জনই দলিত এবং ২২ জন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এই ধরনের অপরাধে ভুক্তভোগী হয়েছেন। পাশাপাশি, এর জেরে সবচেয়ে বেশি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্য যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে। চলতি বছরের প্রথম ছ'মাসে সেখানে ১৮ জন এর শিকার হয়েছেন। স্বস্তিতে নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতও। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে তা। সেখানে ঘৃণা বা বিদ্বেষজনিত হিংসা ঘটেছে মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, তৃতীয় স্থানেও আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য, রাজস্থান। সেখানে ৮ জন এবং তামিলনাড়ু ও বিহারে সাত জন করে মানুষ এর শিকার।

গো-রক্ষকদের তাণ্ডব হোক বা পারিবারিক সম্মানরক্ষার্থে অথবা জাতপাত বা ধর্মীয় বিদ্বেষের ফলে করা অপরাধ— দেশ জুড়ে গত ছ'মাসে তার শিকার হয়েছেন একশো জন প্রান্তিক মানুষ। এমনটাই দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

২০১৫-র দাদরিকাণ্ডের পর থেকেই এ দেশে ধর্ম-বর্ণের কারণে অপরাধের ঘটনার রেকর্ড রাখতে শুরু করে অ্যামনেস্টির ভারতীয় শাখা সংগঠন। ওই বছর উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে গো-রক্ষকদের হামলার মুখে মৃত্যু হয় মহম্মদ আখলাকের। বাড়ির ফ্রিজে গোমাংস রাখা আছে, এই গুজবে আখলাককে পিটিয়ে খুন করে এক দল স্বঘোষিত গো-রক্ষক। অ্যামনেস্টির 'হল্ট দ্য হেট' ওয়েবসাইট-এর দাবি, আখলাক-কাণ্ডের পর থেকে এ দেশে ৬০৩ জনের এ ধরনের অপরাধের শিকার হয়েছেন।

অ্যামনেস্টির আরও দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গো-রক্ষার নামে হিংসার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বা পারিবারিক সম্মান বাঁচাতে খুনের মতো অপরাধ করা হয়েছে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতেই এই ধরণের প্রবণতা বেশি। মেরঠ, মুজফ্‌ফরপুর, সাহরনপুর বা বুলন্দশহরে হিংসার জেরে এ রকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

এ দেশে হিংসার বলি হওয়ার প্রবণতাকে বিশ্লেষণ করে নিজস্ব মতামত দিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর। তাঁর মতে, "ধর্ম-বর্ণ-জাতপাতের ঘৃণা বা বিদ্বেষজনিত অপরাধ (হেট ক্রাইম)এর জেরে অপরাধের সঙ্গে অন্য অপরাধের একটা মূলগত তফাত রয়েছে। এ ধরনের অপরাধের পিছনে মূলত বৈষম্যমূলক মনোভাব লুকিয়ে থাকে।" কী ভাবে মুক্তি মিলতে পারে এর থেকে? এ প্রসঙ্গে তাঁর দাওয়াই, "পুলিশের উচিত তদন্তের সময় যে কোনও ধরনের সম্ভাব্য বৈষম্যমূলক উদ্দেশ্যকে খুঁজে বার করা এবং তা রেকর্ড করা।"