পণপ্রথা রুখতে নয়া আইন, বর-কনে দু’পক্ষকেই জানাতে হবে বিয়ের খরচ


পণপ্রথা রুখতে এবার বিয়ের সামগ্রিক খরচ ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ শীর্ষ আদালতের। বিচারপতি আদর্শকুমার গোয়েল এবং বিচারপতি এস আবদুল নাজিরকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের এক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার পণপ্রথা সংক্রান্ত এক মামলায় কেন্দ্রকে এ ব্যাপারে একটি আইন তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদালতকে সাহায্য করার জন্য অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পিএস নরসিমহাকে দায়িত্ব দিয়েছে বেঞ্চ।

দেশের চলতি আইনে বিয়ের সময় পণ দেওয়া-নেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিয়েতে পণ দেওয়া-নেওয়া আজও দিব্যি চালু রয়েছে। এই পণ নিয়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিনই অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে চলেছে। উপযুক্ত পণ না মেলায় শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক নির্যাতন ও বধূহত্যার খবর নতুন কিছু নয়। এবার এই ঘটনা রুখতে সক্রিয় হল দেশের শীর্ষ আদালত। বিয়ের সামগ্রিক খরচ ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক করতে একটি আইন তৈরির জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। সর্বোচ্চ আদালতের দুই সদস্যের বেঞ্চ এদিন জানায়, পণ দেওয়া-নেওয়া বন্ধ করতে একই সঙ্গে পণপ্রথা বিরোধী আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করার প্রবণতা ঠেকাতে এই আইন চালু করা দরকার। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষই যাতে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে বিয়ের মোট খরচ জানাতে বাধ্য থাকে, এমন একটি আইন তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে খরচের একটা নির্দিষ্ট অংশ নববধূর অ্যাকাউন্টে জমা রাখা যায় কি না সে বিষয়টিও ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছে আদালত। এ বিষয়ে কেন্দ্রের মতামতও জানতে চেয়েছে আদালত। সর্বোচ্চ আদালতের মতে, পণপ্রথাই বেশিরভাগ দাম্পত্য অশান্তির মূল কারণ। তাই এই প্রথার অবসান জরুরি।

এই মামলায় এদিন দুই বিচারপতি বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে কোন খাতে কত খরচ হচ্ছে তা পাত্র এবং পাত্রী উভয় পক্ষকেই সংশ্লিষ্ট এলাকাভিত্তিক ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে বিস্তারিত জানাতে হবে। বিয়ের মোট খরচ দেখে তিনিই ঠিক করবেন বিয়ের খরচ দুই পরিবার যৌথভাবে চালাবে কিনা। কিংবা কোন পরিবার কতটা আর্থিক দায়িত্ব বহন করবে সেটা তিনিই ঠিক করে দেবেন। এছাড়া বিয়ের মোট খরচের একটি অংশ পাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাত্রীর অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ভবিষ্যতে দু'পক্ষই প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে বলে বেঞ্চ জানিয়েছে। এদিনের এই নির্দেশ কেন্দ্রকে বিবেচনা করে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তাঁদের এই পরামর্শের বিষয়ে কেন্দ্রের মতামত কী তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রকে এদিন একটি নোটিস দিয়েছে বেঞ্চ। কেন্দ্র এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করবে সে ব্যাপারেও একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির মতে, এই ব্যবস্থায় বিয়ের খরচের নামে পণের টাকা নেওয়ার প্রবণতা অনেকটাই রোধ করা যাবে।