পুশব্যাক, নাকি পুনর্বাসন, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অসমের এনআরসি বহির্ভূতরা


সংশোধন করা যাবে, নতুন করে আবেদন করা যাবে। আশ্বস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আমলারা বলছেন, এটা চূড়ান্ত খসড়া, তালিকা নয়। এখনই চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু আতঙ্ক আর আশঙ্কার মেঘ কাটছে না। অনিশ্চয়তা অসমের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়া ৪০ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে। পুনর্বাসন, নাকি পুশব্যাক? নয়া কোনও পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, না কি কেড়ে নেওয়া হবে ভোটাধিকার? তালিকা প্রকাশের পর থেকে এ রকম হাজারও প্রশ্ন থাকলেও, উত্তর নেই। জবাব জানা নেই, খসড়ার পর চূড়ান্ত তালিকা থেকেও যাঁরা বাদ যাবেন, তাঁদের ভাগ্যে কী আছে।

অসমের খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজনীতি। সংসদে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদরা। মুলতুবি প্রস্তাব আনতে লোকসভায় নোটিস দেন দলের সাংসদ সৌগত রায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদে এ নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি জানান দলের সাংসদরা।

পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ''নাম না থাকলেই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। নাম বাদ পড়লে অভিযোগ জানানো যাবে। সংশোধন বা নতুন করে নাম অন্তর্ভূক্তির আবেদনও করতে পারবেন। উপযুক্ত নথিপত্র থাকলে কারও নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।'' যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে কট্টর অবস্থানের কথাই বারবার ফুটে উঠছে। দলের নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেছেন, দেশটা ধর্মশালা নয়। তাঁর এই মন্তব্যে নাম বাদ পড়াদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

নআরসি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, আগামী ৩০ অগস্ট থেকে অভিযোগ ও সংশোধনের ফর্ম জমা নেওয়া শুরু হবে। চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরও যাঁরা বাদ পড়বেন, তাঁদের কী হবে। তাঁদের কি ভোটাধিকার থাকবে ?এ বিষয়েও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব সত্যেন্দ্র গর্গ জানিয়েছেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত এই বাদ পড়া নাগরিকদের ভোটাধিকার থাকবে কি না, সেটা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এখনই কাউকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হবে না।

আবার এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা নানা কারণে আবেদনই করতে পারেননি। তাঁদের কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা জানান, ২০১১ সালের জনসংখ্যার সঙ্গে পরবর্তী সুমারির জনসংখ্যা মিলিয়ে দেখা হবে। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হবে। জানানো হয়েছে, অনেকের নথিপত্র পুড়েছে। ভেসে গিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা লোকেদের কাছে অনেক নথি নেই। সব বিষয় মানবিকতার সঙ্গে বিচার করা হবে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত আরও বিভিন্ন রকম প্রমাণপত্র থাকতে পারে। কোনও প্রামাণ্য নথি না থাকলে কিছু করার নেই। লিংকেজ নথি না থাকলেও বিবেচনা হবে।

আশ্বাস যতই থাক, উদ্বেগ বেড়েছে অস্থায়ী ডিটেনশন শিবির তৈরি করে চিহ্নিতদের সেখানে রাখতে শুরু করায়। অসমের গোয়ালপাড়া, কোকরাঝাড়, শিলচর, ডিব্রুগড়, যোরহাট ও তেজপুর ডিটেনশন শিবিরে প্রায় ৯০০ জন সন্দেহভাজন নাগরিককে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে মহিলা ও শিশুও অনেক। ডিটেনশন শিবির প্রকৃতপক্ষে জেলা সংসোধনাগারেরই বর্ধিত অংশ। ফলে এখন থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন অনেকে। ৪০ লাখের মধ্যে যদি ১০ লাখও চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে, তাহলে তাঁদের আশ্রয়ও কি ওই ডিটেনশন শিবিরে হবে। এই আতঙ্কেই দিন গুনছেন এনআরসিতে নাম না ওঠা অসমবাসীরা।

অন্যদিকে অসমের উদাহরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড সরকারও এনআরসি নবীকরণের জন্য অসম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ইতিমধ্যেই ওই দুই রাজ্যের প্রতিনিধিরা বিষয়টির সরেজমিন অভিজ্ঞতা পেতে অসমে হাজির হয়েছেন।