ক্যান্সার আক্রান্তরা কি মা হতে পারেন?


বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হল কসবা রুবি পার্ক এলাকায়। শিবিরটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সামলেছেন কলকাতা পৌরসভার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত কুমার ঘোষ। মুখ্য উদ্যোক্তা ছিলেন অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। সহযোগিতায় ছিল সমাজসেবী সংগঠন হিন্দোল ও বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে প্রায় ১০০ জন মানুষ পরামর্শ নেন।

ক্যান্সার আক্রান্তরা কি মা হতে পারেন?

ক্যান্সার রোগীর কি সাধারণ উপায়ে সন্তান লাভ করা সম্ভব?

একজন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার দরকার পড়তে পারে। এই চিকিৎসার কারণে শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এমনই এক সমস্যা হল ফার্টিলিটির সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণ ফিরে আসার পরও ফার্টিলিটির সমস্যা থেকে যায়। এমন জটিলতা পুরুষ ও মহিলা, দু'তরফেরই হতে পারে। এই সমস্যার কারণ হল, রেডিও বা কেমোথেরাপি থেকে এগ বা স্পার্মের চরিত্রগত এবং গঠনগত বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। ক্যান্সার চিকিৎসা পর্ব মিটলেও এই সমস্যা কিন্তু থেকেই যায়। তাই ক্যান্সার থেকে ফিরে আসা মানুষের সাধারণ উপায়ে সন্তান ধারণ বেশ কঠিন। কিছু ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি এলেও ভ্রূণের নানা সমস্যা দেখা দেয়। 

এক্ষেত্রে আইভিএফ-এর মাধ্যমে কি সাফল্য আসে?

আইভিএফ বা ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে একজন ক্যান্সার রোগীও অনায়াসে বাবা অথবা মা হতে পারেন। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যাঁরা ক্যান্সারকে জয় করার পাশাপাশি আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণেও সক্ষম হয়েছেন। এক্ষেত্রে একজন আইভিএফ বিশেষজ্ঞের কাছে এগ, স্পার্ম বা ভ্রূণ সংরক্ষণ করে রাখতে হয়।

কখন আইভিএফ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে?

দেখুন, পরিসংখ্যান বলছে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখন বহু ক্যান্সার আক্রান্তই রোগ সারিয়ে একদম স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। অথচ সেরে ওঠার পরও সন্তানহীনতার কষ্ট তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁদের। 

এমন সমস্যার সম্মুখীন না হতে চাইলে অবশ্যই সময়ে একজন আইভিএফ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে নেওয়া একান্তই জরুরি। এক্ষেত্রে ক্যান্সার ধরা পড়া মাত্রই চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। কারণ একবার ক্যান্সার চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়ে থাকলে এগ, স্পার্মের গঠনগত পরিবর্তন আসতে পারে। এই সময়ে সংগৃহীত এগ বা স্পার্ম থেকে আইভিএফ পদ্ধতিতেও তেমন কোনও সাফল্যও আসে না। তাই রোগ নির্ণয় হওয়ার পরপরই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। সমস্যা হল, সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও আইভিএফ সম্বন্ধে তেমন কোনও সচেতনতা আসেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞই রোগীকে আইভিএফ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান।

এই প্রসঙ্গে কিছুদিন আগের একটা ঘটনার কথা বলি। ঘটনাটি সদ্য বিবাহিত বয়স ২৫-এর এক মহিলার। একদিন হঠাৎই তিনি ব্রেস্টে ব্যথা অনুভব করেন। ব্যথা এবং ফোলাভাব না কমায় তিনি তাঁর স্বামীকে সমস্যাটির কথা বলেন। তাঁর স্বামী তাঁকে জেনারেল ফিজিশিয়ানের কাছে নিয়ে যান। সেই চিকিৎসক সমস্যার গুরুত্ব বুঝে শহরের নামজাদা একটি ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারে তাঁকে রেফার করে দেন। এরপর সেই চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর মহিলার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে। খবরটি শুনেই আকাশ ভেঙে পড়ল ওই দম্পতির মাথায়। পরিবারের সকলেই ভীষণই চিন্তিত। এমন সময়ে সেই ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দম্পতিকে আস্বস্ত করেন। তাঁরা জানতে পারেন সেই দম্পতির কোনও সন্তানও নেই। তাই ক্যান্সার চিকিৎসক তাঁদের আইভিএফ সেন্টারে যোগযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর সেই দম্পতি আমার কাছে আসেন। আমি মহিলার ভ্রূণ সংরক্ষণ করে রাখি। এরপর চিকিৎসা সম্পূর্ণ হলে, সেই ভ্রূণ মহিলার ইউটেরাসে ইমপ্ল্যান্ট করে দিলেই তাঁরা সন্তান ধারণ করতে সক্ষম হবেন। আশা করি এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে সময়ে একজন আইভিএফ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া কতটা জরুরি।

পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষ কোনও ক্যান্সার আক্রান্তের চিকিৎসার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকে। তাঁরা আগে থেকেই নিজেদের সার্জারি, কেমো, রেডিও ফেরাপির তারিখ জেনে নিতে পারেন। এসব জানার পরই রোগীকে শীঘ্রই একজন আইভিএফ বিশেষজ্ঞর সঙ্গে যোগযোগ করতে হবে।

পদ্ধতিটা কী? 

একজন ক্যান্সার রোগীর এগ, স্পার্ম বা ভ্রূণ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য খুবই কম সময় হাতে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই চিকিৎসক রোগীকে বেশ কিছু টেস্ট করতে বলেন। টেস্টের মধ্যে থাকে হিমোগ্লোবিন, টিসি, ডিসি, সুগার, থাইরয়েড, সেরোলজি, থ্যালাসেমিয়া, হর্মোন, আলট্রা সাউন্ড, স্পার্ম অ্যানালিসিস ইত্যাদি। এরপর এই রিপোর্টগুলির ওপর নির্ভর করে ওষুধের মাধ্যমে স্টিমুলেট করে এগ বা স্পার্ম সংগ্রহ করা হয়। রোগী অবিবাহিত মহিলা হলে এগ ফ্রিজ করে রাখা হয়। অবিবাহিত পুরুষের ক্ষেত্রে স্পার্ম ফ্রিজ করতে হয়। রোগী বিবাহিত হলে দম্পতির এগ ও স্পার্ম গ্রহণ করে কৃত্রিম উপায়ে ভ্রূণ তৈরি করে সংরক্ষণ করা হয়। ফ্রিজিং অবস্থায় ৫ বছর পর্যন্ত এগ, স্পার্ম এবং ভ্রূণ সুস্থ থাকে। 
এরপর ক্যান্সার চিকিৎসা শেষে সংরক্ষিত এগ বা স্পার্ম থেকে ভ্রূণ তৈরি করে শরীরের ভিতরে প্রতিস্থাপন করা হয়। আর ভ্রূণ সংরক্ষণ করা থাকলে সরাসরি সেই ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।

সাফল্যের হার কতটা?

এভাবে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা না গেলেও সাফল্যের হার যথেষ্ট ভালো। বিশেষত, এগ বা স্পার্ম ফ্রিজিং করার তুলনায় ভ্রূণ ফ্রিজ করে রাখলে সন্তান ধারনের সাফল্য অনেকটাই বেশি।