২০ মিনিট ধরে ট্রেন লাইনের পাশে যন্ত্রণায় ছটফট করলেন প্রৌঢ়। এগিয়ে এল না কেউ

মর্মান্তিক: লাইনের ধারে পড়ে রয়েছে প্রৌঢ়ের দেহ।


রেলের দাবি, দুর্ঘটনার পর মেমো লিখে পাঠালে তবে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে রেল পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যার চেষ্টা নয়, ওই ব্যক্তি অন্যমনস্ক থাকাতেই ওই দুর্ঘটনা।


ট্রেন লাইনের ধারে পড়ে ছটফট করছেন এক প্রৌঢ়। তাঁকে ঘিরে জটলা। অনেকে আবার কী হয়েছে শুনে মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছেন নিজের কাজে। কেউ আবার মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত! কিন্তু ওই আহত প্রৌঢ়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার সকলেই উদাসীন!

ট্রেনের ধাক্কায় রবিবার বাঘাযতীন রেল স্টেশনের কাছে প্রায় ২০ মিনিট আহত অবস্থায় ছটফট করতে করতে মৃত্যু হয় ওই প্রৌঢ়ের।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, এদিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ বাঘাযতীন ও নিউ গড়িয়া স্টেশনের মাঝের রেল গেটটি বন্ধ করেছিলেন গেটম্যান। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ডাউন ক্যানিং লোকাল ওই লেভেল ক্রসিংটি পেরিয়ে যাওয়ার মুখেই বছর ৬৫'র প্রৌঢ় লাইন বরাবর ট্রেনের কাছে চলে যান। ট্রেনের ধাক্কায় প্রৌঢ় ছিটকে পড়েন লাইনের ধারে।

মাথা ফেটে রক্ত বার হতে থাকে। হাত, পা'ও ভেঙে যায় ওই প্রৌঢ়ের। ট্রেন চলে যাওয়ার পরেও প্রৌঢ় বেঁচে আছেন দেখে স্থানীয়দের কেউ কেউ গেটম্যানকে অনুরোধ করেন রেল পুলিশকে দুর্ঘটনার কথা জানাতে এবং জখম ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গেটম্যান জানিয়ে দেন বিষয়টি তাঁর এক্তিয়ার বহির্ভূত।

স্থানীয় লোকজন রেলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও তাঁরাও কেউ প্রৌঢ়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেননি। তাঁদের একাংশের যুক্তি, 'পুলিশি ঝামেলা'য় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার এড়াতেই তাঁরা ওই প্রৌঢ়কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাননি। তাই রেল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলেন।

রেলের দাবি, দুর্ঘটনার পর মেমো লিখে পাঠালে তবে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে রেল পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যার চেষ্টা নয়, ওই ব্যক্তি অন্যমনস্ক থাকাতেই ওই দুর্ঘটনা। রেল পুলিশ সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, ''স্টেশন থেকে ঘটনাস্থল বেশি দূরে নয়, কিন্তু রেলের কাছ থেকে মেমো না পেলে পুলিশ গিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে না।''

প্রশ্ন উঠছে, শুধু আইন বা 'পুলিশি ঝামেলা'র দোহাই দিয়ে এমনভাবে কী উদাসীন থাকা যায়! মনোবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, ব্যস্ত নগরজীবন মানবিক মূল্যবোধকে কাড়ছে, এদিনের ঘটনা তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পর যাদবপুর স্টেশনে জিআরপি এবং বালিগঞ্জের আরপিএফ বুথে খবর পৌঁছয়। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। রাত পর্যন্ত ওই প্রৌঢ়ের পরিচয় জানা যায়নি।