ঘন ঘন ফোন, সামনে খোলা ল্যাপটপ, রেস্তরাঁ কর্মীর গোয়েন্দাগিরিতে জালে প্রতারণা চক্র

ধৃতদের বারাসত আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


নিউটাউনের সিটি সেন্টারের নামী এক রেস্তরাঁতে বসেছিলেন তিন যুবক। সামনে ল্যাপটপ খোলা। ঘন ঘন নিচু স্বরে মোবাইলে কথা বলছেন। আর কিছু সময় পর পর সিটি সেন্টার লাগোয়া এটিএমে যাচ্ছেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার এই দৃশ্য দেখেই সন্দেহ হয় রেস্তরাঁরই এক কর্মীর। চুপি চুপি খবর দেন নিউটাউন থানাতে। খবর পেয়ে সাদা পোশাকে পুলিশ আসে। তাঁরাও বেশ খানিক ক্ষণ নজর রাখেন ওই তিন যুবকের ওপর। তার পরেই শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। আর সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে বড়সড় প্রতারণা চক্রের হদিশ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেরার সময় তিন যুবকের পরিচয় জানা যায়। এক জন বিহারের নালন্দার বাসিন্দা নিশান্ত কুমার। এখানে বিরাটিতে ভাড়া থাকেন। বাকি দু'জনের এক জন দিঘার পারজিৎ তালুকদার এবং তৃতীয় জন অভিজিৎ মোদক।

জেরাতেই তাঁরা স্বীকার করেন কী ভাবে প্রতারণা করা হত—

নিউটাউন থানার তদন্তকারীর দাবি, ওঁরা একটি নামী টেলিমার্কেটিং সংস্থার কর্মী সেজে বিভিন্ন মানুষকে ফোন করতেন। ওই টেলিমার্কেটিং সংস্থার নিজস্ব একটি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে একটি ডেটাবেসও পাওয়া গিয়েছে। সেই ডেটাবেস সেই সব ক্রেতাদের যাঁরা এর আগে ওই সংস্থার কাছ থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনেছেন।

সেই ডেটাবেস অনুযায়ী ফোন করায়, ক্রেতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা থাকত ওই যুবকদের। তার ফলে ক্রেতাদের অবিশ্বাস করার কোনও কারণ থাকত না, যখন তাঁদের বলা হত তাঁরা কোনও পুরষ্কার পেয়েছেন সেই সংস্থার থেকে।

প্রথমে সেই পুরস্কারের কথা বলে ক্রেতাকে বলা হত দ্রুত পুরস্কারের জিনিস পেতে গেলে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা প্রসেসিং ফি হিসাবে দিতে হবে। আবার কখনও তাঁরা সেই ক্রেতাদের প্রস্তাব দিত, তাঁরা পুরস্কারের জিনিসের বদলে নগদ টাকাও নিতে পারেন। সেই টাকা নিতে গেলে ৪ শতাংশ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। এই সব ফাঁদে পা দিয়ে ওই প্রতারকদের দেওয়া অ্যাকাউন্টে অনেকেই টাকা পাঠাতেন। আর সেই টাকা বার বার তুলতে গিয়েই পুলিশের জালে তিন প্রতারক। তদন্তকারীরা নিশ্চিত, এই চক্রের পিছনে কোনও বড় মাথা আছে। শুক্রবার এই তিন জনকেই বারাসত আদালতে তোলা হয়।