কেরলে কলেজের পর মাছ বিক্রি করায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্রুপ ছাত্রীকে

কেরলে কলেজের পর মাছ বিক্রি করায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্রুপ ছাত্রীকে , পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ বিজয়নের


তিরুবনন্তপুরম: তীব্র দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই। কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার পর মাছ বিক্রি করেন কেরলের কোচির বিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের পড়ুয়া। আর এই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্রুপের মুখে পড়তে হয়েছে ১৯ বছরের লড়াকু পড়ুয়াকে! এই ঘটনায় ওই পড়ুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পড়ুয়াকে যাঁরা নিশানা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কোচির কাছে একটি কলেজে রসায়নে স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী হানান হামিদ জীবনধারণের প্রয়োজনে মাছ বিক্রি করেন। সিনেমায় জুনিয়র আর্টিস্টের মতো ছোটখাটো কাজও করেন তিনি। বাবার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটে গিয়েছে আগেই। এখন অসুস্থ মায়ের দেখভাল, সেইসঙ্গে পড়ার খরচ চালানোর জন্য এভাবেই কঠোর পরিশ্রম করেন হামিদ। তাঁর এই জীবন সংগ্রাম কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে আসে।

স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে তাঁর এই সংগ্রামের খবর প্রকাশিত হয়। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় হামিদের বিরুদ্ধে বিদ্রুপ-বাণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন একদল ইউজার। মোহনলালের মতো সুপারস্টারের সঙ্গে ওই ছাত্রীর ছবি খুঁজে বের করে তাঁরা দাবি করেন, জীবন সংগ্রামের পুরোটাই বানিয়ে বলেছেন ওই ছাত্রী।কারণ, ওই ছাত্রীকে তারকাদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। ট্রোলারদের একাংশ দাবি করে, মোহনলালের ছেলে প্রণব মোহনলালের সঙ্গে সিনেমায় কোনও চরিত্রে ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পেতেই এ সব করেছেন ওই ছাত্রী।
ওই ট্রোলের জবাবে কাতর আর্জি জানিয়ে ওই ছাত্রী বলেন, তাঁর জীবন সংগ্রামের ঘটনা বানানো নয়। তিনি এভাবেই কঠোর পরিশ্রম করেন। কিন্ত তাঁর এই আর্জিতেও মন গলেনি ট্রোলারদের।

একটি টিভি চ্যানেলে তাঁর কাহিনী সম্প্রচারিত হওয়ার পর রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কমিশন এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের প্রধান লোকনাথ বেহরার কাছ থেকেও রিপোর্ট তলব করেন।

এই ঘটনা সম্পর্কে নিজের ফেসবুক পেজে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, 'পুরো কেরলই হামিদের সঙ্গে রয়েছে। কারণ, তিনি আত্মনিবেদন, দায়বদ্ধতা ও কঠোর পরিশ্রমের মূর্ত প্রতীক। সোশ্যাল মিডিয়া একটা শাঁখের করাত এবং হানানের ফিরে তাকানোর কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি সামনেই এগিয়ে চলবেন দৃপ্তভাবে। কারণ, পুরো রাজ্যই তাঁর সঙ্গে রয়েছে'।
বিজয়নের এই পোস্টের পর তাঁর অফিস থেকে পুলিশের কাছে বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে এর্নাকুলাম জেলা কালেক্টরকেও হামিদকে সব ধরনের সাহায্যের নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দনও হামিদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, 'ওই ছাত্রী এত অল্প বয়সে এত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং রোল মডেল হয়ে উঠেছেন। এই ছাত্রীকেই সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশের বিদ্রুপের ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক'। ওই মেয়েটিকে যাঁরা গালিগালাজ করেছেন, তাঁদের সবার বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।