প্রাথমিক টেট ২০১২ বাতিল নয়, পর্ষদকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা হাইকোর্টের


কলকাতা: প্রায় ১৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে স্বস্তি দিয়ে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট ঘোষণা করল প্রাথমিক টেট ২০১২ বাতিল নয় ৷ তবে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এও জানিয়ে দিল, ব‍্যাপক অনিয়ম হয়েছে। যার জন‍্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ। এক মাসের মধ‍্যে এই টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে ১৯ জন মামলাকারীকে।

বুধবারই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে ইঙ্গিত মিলেছিল, ২০১২'র টেট সম্ভবত বাতিল করা হবে না। শুক্রবার রায়ে সেটাই ঘোষণা করা হল। ২০১২ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় অনিয়ম হয়েছে বলে গতকালই জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ তবে অনিয়ম সত্ত্বেও ইতিমধ্যে নিযুক্ত প্রায় ১৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের ভবিষ্যত ও বৃহত্তর স্বার্থে আদালত ২০১২-এর নিয়োগ বাতিল না করার সিদ্ধান্ত নেয় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৷ তবে মামলাকারীদের দাবিকে মান্যতা দিয়ে অনিয়মের জন্য ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত নেয় বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ৷
অবশেষে পাঁচ বছর পর ভুল স্বীকার। প্রাথমিক টেট ২০১২-এ অনিয়ম হয়েছে, বৃহস্পতিবারই আদালতে ভুল স্বীকার করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তবে এযাত্রায় জরিমানার টাকা গুণে রেহাই পাচ্ছে পর্ষদ। জরিমানার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাপি কান্দার-সহ ১৯ জন মামলাকারীর হাতে এক মাসের মধ‍্যে তুলে দিতে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

মামলার রায় দিতে গিয়ে এদিন হাইকোর্ট এদিন জানায়, ২০১২'র টেটে ৪৫ লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী ছিলেন। পরীক্ষায় বসেন ৩০ লক্ষ। ৩৪ হাজার শূন‍্য পদের জন‍্য পরীক্ষা হয়। টেটের মাধ‍্যমে প্রায় ১৯ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন। সরকারি খরচে এই ব‍্যবস্থা সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন পরীক্ষা বাতিল করলে তা বৃহত্তর জনস্বার্থ বিরোধী হবে। পাশাপাশি, ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভবিষ্যতের যে কোনও টেট নিতে হলে ন‍্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনের নির্দেশিকা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। ২০১৭ সালে টেটের যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, সেখান থেকেই এই নির্দেশিকা মেনে কাজ করবে পর্ষদ।

২০১২ সালে প্রাথমিক টেট পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ৷ ২০১৩ সালে এই পরীক্ষায় বসেন প্রায় ৩০ লক্ষ পরীক্ষার্থী ৷ কিন্তু পরীক্ষায় সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্নের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজা চট্টোপাধ্যায় সহ একাধিক পরীক্ষার্থী ৷ প্রথমে সিঙ্গলবেঞ্চে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে চলে এই মামলার শুনানি ৷ এনসিটিই অর্থাৎ ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন তাদের হলফনামা দিয়ে হাইকোর্টকে জানায়, প্রাথমিক টেট ২০১২ -এর কিছু প্রশ্ন সিলেবাস বহির্ভূতই এসেছে । সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন আসার বিষয়টিকে মান্যতা দিলেও পরীক্ষা বাতিলের নির্দেশ দেননি বিচারপকি বসাক । এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন অসন্তুষ্ট পরীক্ষার্থীরা ৷

সেই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবারই ডিভিশন বেঞ্চ মামলাকারীদের দাবিকে মান্যতা দিয়ে জানিয়ে দেয় অনিয়ম হয়েছে ৷ একইসঙ্গে আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছিল, টেট পরীক্ষায় অনিয়ম হলেও ইতিমধ্যে নিযুক্ত প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার মতো কোনও আশঙ্কা নেই ৷ তাদের ভবিষ্যতের স্বার্থেই পরীক্ষা বাতিলের পরিবর্তে পর্ষদকে মামলাকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ৷ এর ফলে এদিন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবেন ২০১২ টেট উত্তীর্ণ কর্মরত প্রায় ১৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক ৷