মমতাকে বাঁচাতে গিয়ে চাকরি খুইয়েছিলেন পুলিশকর্মী সিরাজুল, ২১ বছর কর্মহীন তিনি


বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুত্যুর মুখ থেকে বাঁচাতে পুলিশ কনস্টেবল সিরাজুল হক মণ্ডল লালবাজারের এক বড়কর্তার দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরেছিলেন।


কর্মহীন: সিরাজুল হক মণ্ডল। পিন্টু মণ্ডল
একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের পঁচিশ বছর পূর্ণ হবে আগামিকাল, শনিবার। ওইদিনের ঘটনায় বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুত্যুর মুখ থেকে বাঁচাতে পুলিশ কনস্টেবল সিরাজুল হক মণ্ডল লালবাজারের এক বড়কর্তার দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরেছিলেন। সেই সিরাজুল ২১ বছর চাকরি থেকে বরখাস্ত। এখনও কর্মহীন।

সিরাজুলের সঙ্গেই লালবাজারের বড়কর্তার নির্দেশ অমান্য করেছিলেন এসআই নির্মল বিশ্বাস। ১৮ বছর আইনি লড়াইয়ের পর চাকরি ফিরে পান তিনি। একই কারণে সার্জেন্ট প্রদীপ সরকারকে প্রমোশন ছাড়াই অবসর নিতে হয়েছে।

একুশে জুলাই কমিশন সূত্রের খবর, বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কমিশনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তাঁরা জানান, '৯৩ সালের ২১ জুলাই ঘটনার দিন দুপুরে মমতা যান ব্রেবোর্ন রোডে। মমতা যাওয়ার পরেই সেখানে বাহিনী নিয়ে হাজির হন লালবাজারের এক বড়কর্তা। তিনি এসে মমতার উদ্দেশে কটূক্তি করেন। মমতা উত্তেজিত হয়ে পড়লে ওই বড়কর্তা মমতাকে আক্রমণের নির্দেশ দেন। শুরু হয় লাঠিচার্জ। মমতার মাথা ফাটে। বিনা প্ররোচনায় লাঠিচার্জের নির্দেশের প্রতিবাদ করেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসআই নির্মল। তিনি বলেছিলেন, 'একজন নেত্রীকে কেন এভাবে লাঠিপেটা করছেন?' সার্জেন্ট প্রদীপ একই বিষয় নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'এটা ঘোরতর অন্যায় হচ্ছে।' বড়কর্তার মারাত্মক একটি মন্তব্যে মাথা ঠিক রাখতে পারেননি সিরাজুল। তিনি বড়াকর্তার দিকে বন্দুক (মাস্কেট) তাক করে বলেছিলেন, 'এই অত্যাচার বন্ধ করুন।' ঘটনার কথা জানিয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চে রিপোর্ট দেন নির্মল।

'৯৭ সালে সিরাজুলকে 'দেরিতে আসা'র কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। টাকার অভাবে হাইকোর্টের পর আর মামলা লড়তে পারেননি সিরাজুল। নির্মলও বরখাস্ত হয়েছিলেন। প্রদীপকে চাকরি জীবনে আর প্রমোশন দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার সিরাজুল বলেন, ''আমার এখনও আট বছর চাকরি ছিল। মুখ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, পুরমন্ত্রীকে আবেদন করেছি। চাকরিটা ফিরে পেলে অভাবটা দূর হত।'' প্রদীপ বলেছেন, ২০১৫ সালে অবসর নিয়েছি, মুখ্যমন্ত্রী ছেলেটাকে একটু সাহায্য করলে ভাল হয়।'' নির্মলের বক্তব্য, ''এই সরকার চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রাপ্য পাওনা পেলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।''