দেহ না দেখেই শংসাপত্র লিখে দেন ডাক্তার!


হাঁটুতে নাকি প্রচণ্ড ব্যথা। তাই দোতলায় ওঠা সম্ভব ছিল না বলে দাবি তাঁর। বাড়ি পর্যন্ত গিয়েও দোতলায় পড়ে থাকা মৃতদেহ দেখেননি তিনি। নীচে দরজার কাছে বসেই 'ডেথ সার্টিফিকেট' লিখে দিয়েছিলেন। ওই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতেই মৃতদেহটি 'পিস হাভ্‌ন'-এ রাখার ব্যবস্থা হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পরে অবশ্য এই মৃত্যু ঘিরেই খুনের মামলা রুজু করতে হয়েছে এন্টালি থানার পুলিশকে। দেহটি পাঠাতে হয়েছে ময়না-তদন্তে।

এখনও গ্রেফতার করা না হলেও পুলিশ ওই চিকিৎসককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এই কাজটি বিধি ভঙ্গের চূ়ড়ান্ত নিদর্শন আখ্যা দিয়ে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল।

গত শনিবার মধ্যরাতে এন্টালির বিবিবাগান লেনে শ্বশুরবাড়িতে মৃত্যু হয় রাবিয়া খাতুন (১৯) নামে এক তরুণীর। ঘটনার সময়ে তাঁর স্বামী মহম্মদ ফৈয়াজউদ্দিন শহরের বাইরে ছিলেন। তিনি না আসা পর্যন্ত দেহটি 'পিস হাভ্‌ন'-এ রাখতে এন্টালির মেরিলি লেনের চিকিৎসক মহম্মদ আলমকে দিয়ে 'ডেথ সার্টিফিকেট' করান তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেটি বেআইনি ভাবে করা হয়েছে বলে জেনেছে পুলিশ। ঘটনার দিনই এই মৃত্যুকে খুন বলে দাবি করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন প্রতিবেশীরা। পণের দাবিতে রাবিয়াকে মারধর করা হত বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন।

গত সোমবার রাবিয়ার বাপের বাড়ির লোকজন বিহার থেকে এসে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরেই মৃতার স্বামী ফৈয়াজউদ্দিন, শ্বশুর মহম্মদ গোলাম রসুল, শাশুড়ি নুরজাহান বেগমকে গ্রেফতার করে এন্টালি থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় রাবিয়ার ননদ নাসরিন বিবিকেও। তাঁকে শুক্রবার আদালতে তোলা হলে ২৩ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত দিয়েছেন বিচারক। এই মৃত্যু ঘিরে এমনিতেই রহস্য রয়েছে, তার মধ্যেই চিকিৎসক আলমের ভূমিকা নজরে আসে তদন্তকারীদের।

মেরিলি লেনে মসজিদ সংলগ্ন ক্লিনিকে রোগী দেখেন চিকিৎসক আলম। শুক্রবার দুপুরে সেখানে গিয়ে চিকিৎসকের খোঁজ মেলেনি। টেবিলে পড়ে ছিল স্টেথোস্কোপ। পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে আলম বলেন (কথোপকথনের রেকর্ডিং রয়েছে), ''ওই রাতে আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু মৃতদেহ দেখিনি।'' দাবি করলেন, তাঁর বয়স ৫৮ বছর। তিনি সিঁড়ি ভাঙতে পারেন না। তাই দোতলায় উঠে মৃতদেহ দেখা সম্ভব হয়নি। মৃতার শ্বশুরের কথা শুনে বাড়ির
দরজায় বসেই 'ডেথ সার্টিফিকেট' লিখেছেন তিনি। এ ভাবে 'সার্টিফিকেট' দেওয়া যায়? আলমের দাবি, ''দেহটি কোল্ড স্টোরে রাখা দরকার ছিল। তাই সার্টিফিকেট দিয়েছি। ওটা ডেথ সার্টিফিকেট নয়।'' নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আলম বলেন, ''পুলিশ ডেকেছিল। সব কাগজ জমা করেছি। পুলিশ আমাকে সাক্ষ্য দিতে বলেছে। যা বলার এ বার পুলিশকেই বলব।''

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই চিকিৎসককে এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে ব্যবহারের ভাবনাচিন্তা চলছে। যদিও অনেকের মতেই ওই চিকিৎসকের কড়া শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি বলেন, ''এ তো চরম অন্যায়। বিধিভঙ্গের চূড়ান্ত নিদর্শন। ওই চিকিৎসকের লাইসেন্স কেড়ে নিয়ে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।''

মৃতার বাবা মহম্মদ জায়েদ হুসেনের প্রতিক্রিয়া, ''এই চিকিৎসকের ভূমিকাও কম নয়। কাউকে যেন ছাড়া না হয়।'' গোয়েন্দাপ্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ''ওই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টাকার জন্য ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন না কি, তিনিও ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত, খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।''