শিবের মাথায় জল ঢালার স্বপ্ন দেখেছিল শ্রাবণ মাসে।


উপোস করে মানত করেছিল দুই কিশোরী। কিন্তু মানত পূরনের আগেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল সুবর্ণরেখার জলে। শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য নদী থেকে জল তোলার সময়ে ডুবে মৃত্যু হল সেই দুই কিশোরীর৷ কোনও ভাবে রক্ষা পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় এখন চিকিৎসাধীন আরও এক কিশোরী৷

মৃত কিশোরীদের নাম বৈশালী মহাপাত্র (১৪), সুদেষ্ণা সাউ (১৩)। সাগরিকা মাহাপত্র হাসপাতালে ভর্তি। সাগরিকাকে স্থানীয়রা অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলেও বৈশালী ও সুদেষ্ণাকে উদ্ধার করতে পারেননি। যখন তাদেরকে উদ্ধার করা হয় ততক্ষণে সব শেষ। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর দুই ব্লকের কুলিয়ানা গ্রামে।

সাগরিকাকে উদ্ধার করে তপশিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার পরেই ওই নদীতে বেআইনি বালি খাদান বন্ধের দাবিতে স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়ারা মৌন মিছল করে। তাদের পাশে দাঁড়ান বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

তিন ছাত্রীই গোপীবল্লভপুর দুই নম্বর ব্লকের রান্টুয়া হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সোমবার গ্রামের কয়েকজন কিশোরী প্রাচীন শিব মন্দিরে শিবের মাথায় জল দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয়। প্রচলিত নিয়ম মেনে তারা গ্রামের একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুবর্নরেখা নদী থেকে জল আনতে গিয়েছিল। নদী থেকে জল তুলতে গিয়ে বৈশালী, সুদেষ্ণা ও সাগরিকারা কোনও ভাবে জলের টানে নদীর গভীরে চলে যায়। স্থানীয় মানুষের চেষ্টায় সাগরিকাকে উদ্ধার করা যায়। সুদেষ্ণা ও বৈশালীর তলিয়ে যায়।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কুলিয়ানা গ্রামের নিকট ওই সুবর্নরেখা নদীতে নিয়মের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে চলে বালি খাদান। মেশিন দিয়ে নদী গর্ভ থেকে বালি তোলার ফলে নদীর চড়ে বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চাশ-ষাট ফুটের গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। নদীর জল বেড়ে চরের গর্তগুলি ভরে যাওয়ার ফলে বোঝার উপায় থাকে না গর্তগুলি কোন জায়গায় রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ এর আগেও গ্রামের বহু গরু-ছাগল গবাদি পশু নদীতে তলিয়ে গিয়েছে।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পরেই বেআইনি বালি খাদানের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। রান্টুয়া হাই স্কুলের পড়ুয়ারা মৌন মিছিল করে। তাদের দাবি, অবিলম্বে কুলিয়ানা গ্রামের কাছে নদীতে বেআইনি বালি খাদান বন্ধ করতে হবে এবং নদী চরে তৈরি হওয়া গর্তগুলি বুজিয়ে দিতে হবে৷ নিহত দুই ছাত্রীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।