ছ’মাসে তিনটি ‘খুন’, উদ্বেগ মল রোডে


খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। গত জানুয়ারিতে দমদমের মল রোডের ৭/৪ কে বি সরণির আবাসনের চারতলায় নিজের ঘরে রহস্যজনক ভাবে রক্তাক্ত হয়েছিলেন একা বৃদ্ধা শিবানী চক্রবর্তী (৬৩)। রক্তক্ষরণের মাত্রা এত বেশি ছিল যে ওই রাতেই বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। সাত মাস আগের সেই ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। এরই মধ্যে একই পাড়ার অভিজাত আবাসনে একই সঙ্গে বৃদ্ধা এবং তাঁর প্রৌঢ়া মেয়ের রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন মল রোডের বাসিন্দারা।

গত শুক্রবার ১৩ কে বি সরণির অভিজাত এক আবাসনের ফ্ল্যাটে মা দীপ্তি চক্রবর্তী (৭৫) এবং মেয়ে স্বাতী চক্রবর্তীর (৫৩) অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। স্বাতীর দু'হাতের শিরা এবং গলায় যে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে তা দেহ উদ্ধারের পরেই স্পষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, সুরতহালের প্রাথমিক রিপোর্টে স্বাতীর পাশাপাশি দীপ্তিদেবীর দেহেও ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক রিপোর্টে খুনের তত্ত্বই জোরালো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। রবিবার স্বাতীদেবীর স্বামী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দুই মেয়ে, বাড়ির পরিচারিকা এবং আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীকে পুলিশ থানায় ডেকে পাঠিয়েছিল। ডাকাডাকির এই পর্ব চালু হতেই সাত মাস আগের ঘটনার কী হল সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে।

ঠিক কী ঘটেছিল সাত মাস আগে?
মৃত বৃদ্ধা শিবানীদেবীর মেয়ে মৌমিতা চক্রবর্তী রবিবার জানান, গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ফোনে মায়ের বিপদের খবর পান তিনি। অফিস থেকে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনি দেখেন, মায়ের সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে তিনি কী ভাবে রক্তাক্ত হন, সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন শিবানীদেবী। বৃদ্ধার মেয়ের কথায়,''মা বলেছিল, একজন হকার ফ্ল্যাটে এসেছিল। জিনিসপত্র পছন্দ না হওয়ায় মা হকারকে চলে যেতে বলেছিল। যাওয়ার সময় সে জল খেতে চাইলে মা জল দেয়। জল খেয়ে সে বাইরে গেলে মা দরজা লাগালেও তা বন্ধ করেনি। ওই হকার ফিরে এসে রান্নাঘরে রাখা শিল দিয়ে পিছন থেকে দু'বার আঘাত করে। মায়ের গলায় একটা সোনার চেন ছিল। সেটা পাওয়া যায়নি। ভারী বস্তুর আঘাতে মা সংজ্ঞা হারিয়েছিলেন। জ্ঞান ফেরার পরে সামনের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীদের সাহায্যে আমাকে খবর দেওয়া হয়।''

এই ঘটনায় দমদম থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির স্বেচ্ছায় কাউকে আঘাত করা, খুনের চেষ্টা এবং চুরির ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়। এ দিন মৌমিতা বলেন, ''সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছিল। শার্ট-ট্রাউজার্স পরা কালো রঙের লম্বা এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ব্যস ওই পর্যন্ত। সাত মাস ধরে তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা নেই।''

পুলিশ সূত্রের খবর, গত শুক্রবারের ঘটনার ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে নিয়েই তদন্তের কাজ শুরু করেছে দমদম থানা। বিকেল ৪টে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে আবাসনে পৌঁছন স্বাতীদেবী। তার আগে পর্যন্ত ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন বৃদ্ধা দীপ্তিদেবী। সূত্রের খবর, ওই সময়ের কাছাকাছি একজন বহিরাগতকে সিসি ফুটেজে চিহ্নিত করা গিয়েছে, যার দু'হাতে ব্যাগ ছিল।

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ''সাত মাস আগে কী ঘটেছিল তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এখনকার ঘটনার তদন্ত চলছে।'' বাসিন্দাদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে দমদম পুরসভার স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দেবিকা রায় বলেন, ''বারবার দিনেদুপুরে এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে তা পুলিশ প্রশাসনের দেখা উচিত।''