কাঁকিনাড়া থেকে কি পিস্তল যেত বাংলাদেশে জামাত জঙ্গিদের হাতে?


কাঁকিনাড়ায় লাড্ডু কারখানার আড়ালে তৈরি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র কি জামাত জঙ্গিদের জন্য তৈরি হচ্ছিল? সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। সেই সঙ্গে অস্ত্রের পাশাপাশি জাল নোট কারবারের নয়া সমীকরণের হদিশ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

এসটিএফ সূত্রে খবর, এই কারখানায় তৈরি পিস্তলের ৮০ শতাংশই যেত বাংলাদেশে। আর সেই কারণেই মালদহ জেলার কালিয়াচকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে তৈরি করা হয়েছিল আর একটি ইউনিট। কাঁকিনাড়া থেকে অর্ধেক তৈরি এই অস্ত্র সোজা চলে যেত কালিয়াচকে। সেখানে সেই অস্ত্রের কাঠামোর সঙ্গে বাকি যন্ত্রাংশ জুড়ে সেটাকে সম্পূর্ণ করা হত। সেখানেই পালিশ করে ব্যবহারের উপযুক্ত করা হত।

সোমবার সেই মালদহে সূত্র ধরেই এই অস্ত্র কারখানার হদিশ পান কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) গোয়েন্দারা। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, "আমরা খবর পেয়েছিলাম, মালদহ থেকে জাল নোট এনে এখানে পরখ করে দেখবে এক জাল নোট কারবারি। সেই সূ্ত্র ধরেই কালিয়াচকের শুকু শেখকে পাকড়াও করা হয়।"

আরও পড়ুন, নিজের দেশেই উদ্বাস্তু ৪০ লক্ষ, বাঙালি খেদাও চলছে, তোপ মমতার
গোয়েন্দাদের অবাক করে দিয়ে সেই শুকুর কাছ থেকে জাল নোটের সঙ্গে পাওয়া যায় ৪০টি অর্ধেক তৈরি পিস্তল। তাঁকে জেরা করেই প্রথমে হদিশ মেলে দুই অস্ত্র কারবারি আমজাদ রায়ান এবং আবদুল্লা। এদের কাছ থেকে খোঁজ মেলে কাঁকিনাড়ার অস্ত্র কারখানার।

এসটিএফের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, প্রায় সাত মাস ধরে কাঁকিনাড়ায় এই অস্ত্র কারখানা চালাচ্ছিল এরা। এই কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে একটি ডায়েরির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকেই জানা যায়, এখানে তৈরি অস্ত্রর প্রায় পুরোটাই চলে যেত বাংলাদেশে। এসটিএফের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে এই কারখানায়। এক গোয়েন্দা বলেন, "ডায়েরি থেকে জানা গিয়েছে, মাসে প্রায় ৫০০টি পিস্তল তৈরি করা হত এখানে।"

আর সেখান থেকেই উঠে এসেছে প্রশ্ন, এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কারা কিনছে?
এক গোয়েন্দা বলেন,"ছোটখাট দুষ্কৃতীদলের পক্ষে এত অস্ত্র একসঙ্গে কেনা প্রায় অসম্ভব। তাই এরা যখন এত অস্ত্র নিয়মিত মালদহে পাঠাতো, তার থেকে এটা অনুমান করা যায়, এদের ক্রেতা কোনও বড় গোষ্ঠী।"
গোয়েন্দারা ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছেন, এরা তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এই ৯ মিমি এবং ৭.৬৫ মিমি বোরের পিস্তলগুলি পাইকারি হারে বিক্রি করত তারা। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, "অস্ত্রের দাম কম রাখতে এবং ঝুঁকি কমাতে মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিরা ইদানীং নয়া পদ্ধতি নিয়েছে। তারা অস্ত্রের কারিগরদের এখানে নিয়ে এসে অস্ত্র বানাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়। এরা এক জায়গায় গোটা অস্ত্র বানাচ্ছে না। এক জায়গায় কাঠামো, কোথাও স্প্রিং, কোথাও ট্রিগার তৈরি হচ্ছে। সেগুলি আবার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জোড়া লাগানো হচ্ছে।"

আরও পড়ুন, সুখবর! রাজ্য সরকারি কর্মীদের ২০১৯ থেকেই বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত
ধৃতেরা যেহেতু বাংলাদেশে অস্ত্র সরবরাহ করত, তাই সীমান্তবর্তী গ্রামে অ্যাসেম্বল বা জোড়া লাগানোর কারখানা করেছিল। যাতে খুব সহজে ব্যবহারের উপযুক্ত অস্ত্র সোজা ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া যায়।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, মালদহের সেই কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে যারা এই কারবারে যুক্ত ছিল তারা ফেরার।
এই অস্ত্র কারখানার বাংলাদেশ যোগ গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে। তাঁদের সন্দেহ, এই অস্ত্র বাংলাদেশের কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে যেত। সেই সঙ্গে অসমের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সমীকরণ আরও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। ২০১২ সালে অসমে বোরো-মুসলিম অশান্তিকে কাজে লাগিয়েই জমি শক্ত করেছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ঘুরে সেই অস্ত্র আবার অসম এবং সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গেও পৌঁছতে পারে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।