গয়না, পোশাকের নামে ১০০ কোটির প্রতারণা ব্যাঙ্ককে


হিরের গয়না, সোনার ব্রেসলেট, দামি পাথর বসানো কানের দুল তৈরি করা হবে কলকাতার এবং বাইরের ক্রেতাদের জন্য। তার জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে নেওয়া হয়েছিল প্রায় তিরিশ কোটি টাকার ঋণ। কিন্তু ব্যাঙ্কের যতক্ষণে হুঁশ ফেরে, ততদিনে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে পুরো টাকাই। প্রায় দশ বছর আগে ঋণ নেওয়া টাকা আদায় করতে গিয়ে এখন সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ব্যাঙ্কের দায়ের করা এফআইআরের উপর ভিত্তি করে ক্যামাক স্ট্রিটের একটি নামি স্বর্ণপ্রস্তুতকারী সংস্থার তিন ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, শিশুদের পোশাক তৈরির নাম করে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পরিশোধ না-করায় মির্জা গালিব স্ট্রিটের একটি পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করেছে স্টেট ব্যাঙ্কের এসএমই ব্রাঞ্চ। 
কী ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে ব্যাঙ্কের সঙ্গে? ব্যাঙ্কের জীবনদীপ ভবনের জোনাল ম্যানেজার গৌতম সাহা কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে চলতি মাসে দায়ের করা অভিযোগে বলেছেন, ওই সংস্থার ক্যামাক স্ট্রিটে একটি বড় শোরুম রয়েছে। ২০০৯ সালে ঋণ নেওয়ার আগে তারা ব্যাঙ্ককে জানায় হাওড়ার ডোমজুড়ে তাদের একটি কারখানা রয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁচামাল কিনে তারা ওই কারখানায় গয়না তৈরি করে বিক্রি করতে চায়। এই আবেদনের ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর কয়েক দফায় প্রায় তিরিশ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। ঋণ নেওয়ার শর্ত হিসেবে চৌরঙ্গি রোডের একটি সাত হাজার স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাট, বেলভেডিয়ার রোডের একটি তিন কাঠার বাণিজ্যিক জায়গা এবং ২৫ লক্ষ টাকার বিমা মর্টগেজ হিসেবে জমা রাখা হয়। যার সবগুলি ছিল এই সংস্থার ডিরেক্টরদের নামে। প্রথম দিকে সমস্যা না-থাকলেও, ২০১১ সাল থেকে ব্যাঙ্কে ঋণের টাকা জমা পড়া নিয়ে ঝামেলা দেখা দিলে ব্যাঙ্ক খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে ওই সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে স্টক স্টেটমেন্ট জমা দিচ্ছে না। শুধু তাই নয়, ব্যবসায় ঠিক মতো টাকা না-খাটিয়ে সেই টাকা অন্য ফান্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর পর সন্দেহের ভিত্তিতে ব্যাঙ্কের অফিসারেরা ক্যামাক স্ট্রিটের শোরুমে গিয়ে দেখতে পান সেখানে কোনও গয়না বা হিরে স্টকে নেই। গৌতমের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তদন্ত করে দেখা যায় ব্যাঙ্ককে মর্টগেজ হিসেবে যে সম্পত্তি দেখানো হয়েছে তার প্রতিটি বহু আগে অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে মর্টগেজ হিসেবে জমা রাখা আছে। যে সব কাগজপত্র ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হয়েছে তাও অধিকাংশই জাল। এর পরই এফআইআর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 
পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থাটি কী করেছে? সিবিআই সূত্রের খবর, মির্জা গালিব স্ট্রিটের সংস্থাটি এ রাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে পোশাক সরবরাহ করার জন্য প্রথমে ইউবিআই থেকে ৭৫ লক্ষ ঋণ নেয়। তার পর সেই ঋণ ট্রান্সফার করা হয় স্টেট ব্যাঙ্কে। সেই ঋণের অঙ্কও বাড়িয়ে নেওয়া হয় অনেকটাই। তার বিনিময়ে টালিগঞ্জ, চারু মার্কেট এবং প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এলাকার প্রায় ১১টি ফ্ল্যাট মর্টগেজ হিসেবে জমা রাখা হয়। কিন্তু ২০১৪ সাল নাগাদ ব্যাঙ্কের টাকা জমা পড়া বন্ধ হতেই খোঁজ নিয়ে জানা যায় ঋণ নেওয়া প্রায় ৩৫ কোটি টাকা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় খাটানো হচ্ছে। ওই যে সম্পত্তি ব্যাঙ্কের কাছে গচ্ছিত রয়েছে তার অধিকাংশই জাল কাগজপত্র দিয়ে করানো হয়েছে। সুদ এবং আসল মিলিয়ে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা প্রতারণার পর সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।