সারদা মামলা: দিল্লির নির্দেশে চূড়ান্ত চার্জশিট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু


যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে সারদা তদন্ত গুটিয়ে আনার কাজ। এতটাই যে, সাত বছর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের খরচের হিসেব নতুন করে খতিয়ে দেখতে বসেছে সিবিআই।

কেন এই সাজো সাজো রব?

কারণ, সারদা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়ার নির্দেশ এসে পৌঁছেছে দিল্লি থেকে।


সারদা অর্থ লগ্নি সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে এ-পর্যন্ত আদালতে পাঁচটি চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। এ বার চূড়ান্ত চার্জশিট। মাস দেড়েকের মধ্যে সেই চার্জশিট জমা দেওয়া হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তবে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, রোজ ভ্যালির তদন্ত শেষ করতে এখনও অনেক সময় লাগবে।

২০১১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হেলিকপ্টার ব্যবহার খাতে তৃণমূলের কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। সেই টাকা কোথা থেকে এসেছিল, সিবিআইয়ের কাছে তার সুস্পষ্ট তথ্য নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। একই ভাবে ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দলের টাকা খরচের খতিয়ানে আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে রয়েছে। নতুন করে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার টাকা তৃণমূলে ঢুকেছিল বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বিক্রির টাকা নিয়েও ঝুলে আছে নানান প্রশ্নচিহ্ন। এই সব খরচের হিসেব আরও ভাল ভাবে খতিয়ে দেখতে এখন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের শরণাপন্ন হচ্ছে সিবিআই। দিল্লি ও পটনার বেশ কয়েক জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দিল্লি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে কলকাতার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অমিতাভ মজুমদারকে।

সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১৪ সালে তদন্তের শুরুতেই তাদের হাতে তৃণমূলের দলীয় খরচের খতিয়ান পৌঁছে গিয়েছিল। হিসেব বলতে '১০-'১১ থেকে শুরু করে '১৩-'১৪ আর্থিক বছরের যাবতীয় খরচ। পরে, ২০১৫ সালে তৃণমূলের কাছ থেকেই তাদের হিসেব ফের চেয়ে পাঠানো হয়। তখনও দলের সম্পাদক ছিলেন মুকুল রায়। কিন্তু সেই হিসেব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন সুব্রত বক্সী।

তবে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, অত কিছু জানা সত্ত্বেও সিবিআই এত দিন চুপ করে বসে ছিল কেন? চুপ করে থাকাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সারদা নিয়ে সিবিআই ঝিমিয়ে পড়ল কি না, সেই প্রশ্ন উঠছিল। ঝিমিয়ে পড়া কেন? নতুন করে হঠাৎ গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠার কারণটাই বা কী?

উত্তর মিলছে না। গত ১৯ জুন কলকাতায় আসেন সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানা। তার পরেই আচমকা গতি পায় তদন্ত। সামনে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সারদা-নারদ তদন্তে আচমকা এই তৎপরতা নিয়ে স্বভাবতই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে শুধু নিজেদের প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিতেই আস্থানা এসেছিলেন, নাকি নির্দিষ্ট কোনও বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, জল্পনা চলছে তা নিয়েও।

প্রশ্ন উঠছে, সারদা নিয়ে চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়ার তোড়জোড় চললেও রোজ ভ্যালির তদন্ত জিইয়ে রাখা হচ্ছে কেন? তা হলে কি সেই জিইয়ে রাখা তদন্ত পরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে?