চা-এও ছাড় নেই, এবার শহরবাসীকে ভয় দেখাচ্ছে ‘ভাগাড়ের ভাঁড়’


মাটির ভাঁড়ে ধোঁয়া ওঠা চা৷ দেখেই মন উচাটন! চুমুক দিলেই দিল খুশ! তাই শহর-মফঃস্বলে রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে মাটির ভাঁড়ের কদর আদি অনন্তকালের। কিন্তু সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ধারণাটাকে বেবাক পাল্টে দিতে পারে। বরং ভাঁড় দেখলেই ঘেন্নায় গুলিয়ে উঠতে পারে গা। কারণ ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, নোংরা পোশাকের একটি লোক আঁস্তাকুড় থেকে বেছে বেছে আস্ত মাটির ভাঁড় কুড়িয়ে পুরছে ততোধিক নোংরা বস্তায়। যেগুলি কিনা আবার বিভিন্ন দোকানের ব়্যাকে সাজিয়ে রাখা হবে, গরম চায়ে পরিপূর্ণ করে খদ্দেরের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। খদ্দের তাতে পরম আয়েশে চুমুক দেবেন। জানতেও পারবেন না, ডাস্টবিন ফেরত 'ভাগাড়ের ভাঁড়ে চুমুক দিচ্ছেন।

হ্যাঁ, ভাগাড়ের ভাঁড়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৌলতে আপাত নিরীহ মাটির ভাঁড়কে আপাতত এই নামেই সম্বোধন করতে শুরু করেছেন অনেকে। ভিডিওটির সত্যাসত্য যাচাই হয়েছে কি না, তার অপেক্ষা থাকছে না। এ ব্যাপারে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে আশঙ্কা যে নেহাত অমূলক নয়, একান্ত আলাপচারিতায় তাবড় পুলিশকর্তারাও তা ঠারেঠোরে স্বীকার করছেন। "এমনটা হওয়া আশ্চর্য কিছু নয়। চা খেয়ে অনেকেই ভাঁড় না ভেঙে ফেলে দেন। জঞ্জাল থেকে তা কুড়িয়ে ফের সস্তায় দোকানে বেচলে দেখছে কে?" মন্তব্য এক আধিকারিকের। তাঁর কথায়, "অল্প পরিশ্রমে দু'পয়সা রোজগারের রাস্তা দেখলে অনেকেই প্রলুব্ধ হতে পারে। বিশেষত ড্রাগখোরেরা। এতে ঝুঁকিও কম।"

বস্তুত নেশার টাকা জোগাড় করতে কিছু মাদকাসক্ত পুরনো ভাঁড় কুড়িয়ে বিক্রি করছে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের একাংশ। এঁদের মতে, ভিডিওটি ভুয়ো না-ও হতে পারে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ফুটপাথের উপর একটি ডাস্টবিন থেকে ভাঁড় কুড়িয়ে নিচ্ছে। তাও বেছে বেছে। সে ফেলে দিচ্ছে ফাটা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ভাঁড়। আস্তগুলি কুড়িয়ে রাখছে তার হাতে ধরা বস্তায়। একটি ভিডিও ফুটেজে উঠেছে সেই দৃশ্য। যে ব্যক্তি ভিডিওটি করেছেন, তিনি ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করছেন, এই ভাঁড় নিয়ে কী করা হবে? সে কি ভাঁড়গুলি বিক্রি করবে? সরাসরি কোনও দোকানে বিক্রি করবে না কি যাঁরা ভাঁড় ব্যবসায়ী, তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে? লোকটি উত্তর দেয়নি। বরং একটু হেসে বস্তা নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায়। ততক্ষণে সে বস্তায় কুড়িয়ে নিয়েছে বেশ কিছু ভাঁড়। ভিডিওটি কতদিন আগে তোলা, তা জানা যায়নি। যিনি মোবাইলে ভিডিওটি তুলেছেন, তাঁকেও দেখা যায়নি। কিন্তু দেখা গিয়েছে ঘটনাটি। এর পর সেটি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। শহরের কোনও একটি জায়গার ডাস্টবিন থেকে তোলা হয়েছে ভাঁড়গুলি। কিন্তু শহরের অন্যান্য জায়গা থেকে যে আস্ত ভাঁড় তুলে তা বিক্রি করা হয়, এমন সম্ভাবনাও থেকে যায়। যদিও সাধারণভাবে চায়ের দোকান লাগোয়া ডাস্টবিনে পড়ে থাকা ভাঁড় প্রত্যেকদিন সকালেই কলকাতা পুরসভার কর্মীরা তুলে নিয়ে যান। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, তার আগেই রাস্তায় নেমে পড়ে ওই ভাঁড় কুড়ানিরা। পুরকর্মীরা নিয়ে যাওয়ার আগেই তারা ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে নেয় আস্ত মাটির ভাঁড়গুলি৷