নিত্যনতুন সঙ্গী নিয়ে আসবেন নাকি! তা হলে ঘর ভাড়া হবে না


''লিভ-ইনের জন্য ভাড়া দিতেই পারি। কিন্তু নিত্যনতুন মেয়ে নিয়ে আসা যাবে না''— বলছেন কেউ।

কারও প্রশ্ন, ''সঙ্গী নিয়ে মাঝেমধ্যে এক-আধ দিনের জন্য আসবেন? না কি মাসে কয়েক দিন এসে থাকবেন?''

 বোঝা গেল, কলকাতার কাছে 'লিভ-টুগেদার' অচেনা শব্দ না হলেও এখনও অজানা লিভ-ইনের অর্থ।

দেশের বেশ কিছু বড় শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে গিয়ে লিভ-ইন যুগল সমস্যায় পড়েছেন, এমন কিছু ঘটনা সম্প্রতিও নজরে এসেছে। কলকাতা কী ভাবছে? তা জানতে নেওয়া হয় ছদ্ম পরিচয়। সরকারি আর্ট কলেজের সঙ্গে যুক্ত চিত্রশিল্পী এবং কলেজ শিক্ষিকা— এই পরিচয়ে বেরনো হয় ভাল-বাসার খোঁজে।

টালিগঞ্জের শ্রীকলোনি বাজারের কাছে এক বহুতলে দোতলার ফ্ল্যাট দেখানোর অপেক্ষায় ছিলেন মালিক। খোলামেলা বড় ঘর, লম্বা বারান্দা, জানলার পাশে নিম গাছের ডাল— সব কিছুই বেশ উৎসাহ নিয়ে দেখাচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যেই টুক করে জানানো গেল— ''আমরা কিন্তু লিভ-ইন করতে চাই।''

শুনেই থমকালেন ফ্ল্যাটমালিক। প্রশ্ন করলেন, ''কী করেন?'' উত্তর দিতেই ধেয়ে এল বাউন্সার— ''একাধিক মেয়ে নিয়ে আসবেন না তো?''

নিউ টাউন এলাকায় বাড়ি খুঁজতে শরণাপন্ন হতে হয়েছিল 'ব্রোকার'দের। তেমনই একজনের সামনে লিভ-ইনের কথা তুলতেই প্রশ্ন, ''সঙ্গী নিয়ে মাসে এক-দু'দিন আসবেন না কি মাসে কয়েক দিন থাকবেন?'' আর পাঁচ জনের মতোই সংসার করতে চাই— এ কথা শুনেও তাঁর বিশ্বাস জন্মাল না। বললেন, ''অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-তে অনেক ফ্ল্যাট খালি আছে। ও দিকের ফ্ল্যাট মালিকেরা অনেকেই বাইরে থাকেন। ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে।''

দমদমের হনুমান মন্দিরের কাছে একটি বহুতলে গিয়েও একই অভিজ্ঞতা। সেখানে ছ'তলায় দু'কামরার ফ্ল্যাট ঘুরে দেখার পরে লিভ-ইন প্রসঙ্গ উত্থাপন। প্রোমোটার তথা ওই ফ্ল্যাটের মালিক সাফ বলে দিলেন, ''লিভ-ইনের নামে নিত্যনতুন ছেলে-মেয়ে ঘরে আনা চলবে না! এটা ভদ্রলোকের পাড়া।'' এমন ভাবছেন কেন? সাফ জবাব, ''এই চত্বরে আগে এ রকম ঘটনা ঘটেছে। থানা-পুলিশের ঝামেলা হয়েছে।''

ঝামেলা এড়াতে তাই পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে মুখ না খোলার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে। যাদবপুরের সুলেখা এলাকায় ষাটোর্ধ্ব এক ফ্ল্যাটমালিকের প্রতিক্রিয়া, ''লিভ-ইন নিয়ে আমার আপত্তি নেই। তবে ঢাকঢোল পিটিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের  তা বলার প্রয়োজন নেই। তা হলেই ঝামেলা হবে না।''

লিভ-ইনের ঝামেলায় নিজেদের জড়াতে চান না, এমন বাড়িমালিকদের দেখাও মিলল। নাগেরবাজার চত্বরে এক কামরার ঘর ভাড়া আছে, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে এমনই এক বাড়িতে যাওয়া। দেখা গেল, দোতলায় দুই ছেলেকে নিয়ে ভরা সংসার করা ওই বৃদ্ধ তাঁর গ্যারাজ সংলগ্ন এক কামরার অংশটি ভাড়া দিতে চান। আগন্তুকদের সম্ভবত 'পছন্দ'ও হয়েছিল। তখনই আলতো করে বলা গেল, ''লিভ-ইন করতে চাই, আপত্তি নেই তো?'' শুনে মাথা নেড়ে জানালেন, না! কেন? বৃদ্ধের জবাব, ''পুরনো পাড়া। এখানে এরকম কেউ থাকে না। ছেলেরাও কেউ রাজি হবে বলে মনে হয় না।''

লিভ-ইনের কথা জেনেই মাথা নাড়তে শুরু করলেন দমদমের এক বাড়ি মালকিন। সাফ জানালেন, ঝুট-ঝামেলা তিনি চান না। কীসের ঝামেলা? মধ্যবয়স্কার কথায়, ''মারধর-ঝগড়াঝাঁটি হলে থানা পুলিশের হ্যাপা তো আমাকেই সামলাতে হবে! ও হবে না।'' বৈবাহিক দাম্পত্যে এগুলো কি বিরল? উত্তর পাওয়া যায়নি। ব্যতিক্রমও রয়েছে। বিজয়গড় বাজারের কাছে এক কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে চান স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষিকা। বিপত্নীক বাবার দেখাশোনা করতে পাশের গলিতেই সপরিবারে থাকেন তিনি। ফ্ল্যাট দেখতে আসা যুগল যে লিভ-ইন করতে চায়, তা আগে জানানো হয়নি তাঁকে।  শুনে 'বাপি বাড়ি যা' স্টাইলে ব্যাট হাঁকালেন শিক্ষিকা— ''মাসের প্রথমে ভাড়াটা ঠিকঠাক পাওয়া নিয়ে কথা। লিভ-ইন নিয়ে সমস্যা নেই।'' পাড়ায় যদি কেউ ঝামেলা করে? ''আমাকে জানাবেন। ওটা সামলানো আমার দায়িত্ব।'' যাক! ভরসা হল!