পড়ুয়াদের মাদক পাচার, এনসিবি জালে ব্যবসায়ী


এলএসডি, মেথিলিন ডিঅক্সি মেথামফেটামিন বা এমডিএমএ থেকে কোকেন। যা চাইবেন হাতে হাতে পৌঁছে যাবে খদ্দেরের কাছে। 

এ ভাবেই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে অভিজাত ক্লাবের পার্টিগোয়ারদের হাতে মাদক পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করল নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব বলেন, 'ধৃতের নাম মুব্বাসির আন্নান। বাড়ি ভবানীপুরে।' তাঁর কাছ থেকে ৩৫টি এলএসডি ব্লট এবং ৭ গ্রাম এমডিএমএ পিল বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। উদ্ধার হওয়া মাদকের মূল্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। তাঁকে জেরা করে আরও বড় চক্রের হদিস মিলতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তিনি মূলত স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কাছেই অর্ডার মতো মাদক পৌঁছে দিতেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।

দু'দিন আগেই মাদক সেবন ও পাচারের অভিযোগে শহরের দুই নামী ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজের পড়ুয়াদের পাকড়াও করেছে কলকাতা পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, আরও অন্তত জনা কুড়ি-পঁচিশ কলেজ পড়ুয়া রয়েছেন এই চক্রে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে। গত এক বছরে কলকাতা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পড়ুয়া, পার্টিগোয়ার, ব্যবসায়ী ও নামী ক্লাবের ডিস্ক জকিদের নাম মাদক পাচারে বার বারই জড়িয়েছে। এনসিবি-র পাশাপাশি ডিআরআই, কাস্টমসের মতো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং কলকাতা পুলিশ বা সিআইডি-র মতো এজেন্সিগুলির তৎপরতাও বেড়েছে। তবে যে ভাবে প্রায় প্রতিদিনই কলকাতা বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় হরেক কিসিমের মাদকের চক্র ধরা পড়ছে, তাতে এর শিকড় যে কত গভীরে, তা ভেবে বিস্মিত গোয়েন্দারও।

এনসিবি সূত্রের খবর, মুব্বাসিরকে প্রাথমিক জেরায় তাঁর এক সঙ্গীর নাম জানা গিয়েছে। সেই কলেজ পড়ুয়া রয়েছেন বেঙ্গালুরুতে। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে। গোয়েন্দারা জানান, মুব্বাসিরের ড্রাগের বরাত আসত মূলত বেঙ্গালুরু থেকেই। মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি নামী কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ মাদকের বরাত দিতেন মুব্বাসিরকে। সেই মতো তিনি অর্ডার পাঠিয়ে দিতেন বেঙ্গালুরুতে। সেখান থেকে মাদক ডেলিভারি হলে সাংকেতিক কোড নেমে ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে পৌঁছে দিতেন মুব্বাসির। বেঙ্গালুরুতে কলেজে পড়তে যাওয়া মুব্বাসিরের সঙ্গীর মাধ্যমেই মাদক কলকাতায় আসছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। এর আগেও এনসিবি-র তদন্তে মাদক পাচারে বেঙ্গালুরুর একাধিক কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়ার যোগ মিলেছে। কয়েক জন ধরাও পড়েছেন। তার পরও শিকড় পর্যন্ত পৌঁছনো যাচ্ছে না বলে মনে করছেন পুলিশ ও গোয়েন্দাকর্তাদের একাংশ। 

এনসিবি-র এক আধিকারিক জানান, এলএসডি বা এমডিএমএ-র পাশাপাশি কোকেনও সরবরাহ করতেন মুব্বাসির। তবে কোকেনের দাম অনেক বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা নয়, কোকেন ক্রেতাদের তালিকায় অভিজাত ঘরের লোকজনেরই নাম। কিন্তু পড়ুয়াদের মধ্যে নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে না? এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, সন্দেহের বশে কোনও কলেজে গিয়ে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া বা তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলা মুশকিল। কারণ, সুনাম নষ্ট হতে পারে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তারা এমন আশঙ্কায় থাকেন। তবে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই পড়ুয়াদের মাদকের গ্রাস থেকে বের করার চেষ্টা চলছে।