মুখ থেকে গ্যাঁজলা ওঠা ছবি প্রেমিকাকে পাঠিয়ে আত্মহত্যা কিশোরের

জলপাইগুড়ি : "আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যাও।" এটাই ছিল মৃত্যুর আগে প্রেমিকের শেষ কথা। অভিযোগ, প্রেমিকার জবাব ছিল, "তুই মরে যা"। এরপরই শেষবার বিষভর্তি গ্লাসে চুমুক দেয় প্রেমিক। হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় হোয়াটসঅ্যাপে লেখা। মৃত্যু হয় সৌপ্তিকের।

সৌপ্তিক মণ্ডল। জলপাইগুড়ি জেলার পাণ্ডা পাড়ার বাসিন্দা। জেলা স্কুলে ফার্স্ট ইয়ারে পড়াশোনা করত। স্থানীয় এক কিশোরীর সঙ্গে ক্লাস এইট থেকে পরিচয়। সেই পরিচয়ই বদলে গিয়েছিল প্রেমের সম্পর্কে। কিন্ত, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওই কিশোরী সৌপ্তিকের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করে। জানা গেছে, গত ৬ জুলাই দুপুরবেলা সৌপ্তিক হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানায়, সে বিষপান করে আত্মহত্যা করবে। সৌপ্তিকের বাবার অভিযোগ, সেই কথায় পাত্তা দেয়নি ওই কিশোরী। এমনকী বিষ খাওয়ার পর ছবি তুলেও পাঠায় সে।

সৌপ্তিকের বাবা শান্তি মণ্ডল বলেন, "ও আমার ছোটো ছেলে। মেয়েটা এই ঘটনার কথা পুরো জানত। ও যদি তখনও আমাদের ফোন করে একটু সতর্ক করত, তাহলে ছেলেটাকে বাঁচাতে পারতাম। মেয়েটাই হোয়াটসঅ্যাপের লাইভ চ্যাটে আমার ছেলেকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছে। আমি ওর কঠোর শাস্তি চাই।"

সেইসঙ্গে তিনি এও যোগ করেছেন, "আজ আমার ছেলের জন্য যদি মেয়েটা মারা যেত, তাহলে আমাদের কী অবস্থা হত। আমরা তো এই পাড়ায় থাকতেই পারতাম না। কিন্তু, এই ঘটনা যাতে অন্য কারোর সঙ্গে না হয়, তাই কঠোর শাস্তি চাই।"

যদিও হোয়াটসঅ্যাপে নিজের যে গ্যাঁজলা ওঠা মুখের ছবি সৌপ্তিক পাঠিয়েছে তা আনসিন অবস্থায় রয়েছে। ফলে ওই কিশোরীর সঙ্গে সৌপ্তিক লাইভ চ্যাট করছিল তা প্রমাণিত নয়। গত ৬ জুলাই বিষপানের পর সৌপ্তিককে সদর হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। সেখান থেকে তাকে আনন্দলোক নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতেও। তবে শেষরক্ষা হয়নি। 

আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ওই কিশোরীর বিরুদ্ধে জলপাইগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল ওই কিশোরীকে আটক করা হয়।

থানায় বসে ওই কিশোরী বলে, "আমার সঙ্গে সৌপ্তিকের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, এবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ওকে আমি প্রত্যাখান করি। আমাকে মেসেজ করত ঠিকই। মাঝেমধ্যে আত্মহত্যারও হুমকি দিত। প্রথম প্রথম আমি খুব ভয় পেতাম। কিন্তু, তারপর খোঁজ নিয়ে দেখতাম ও কোথাও গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। ও মারা গেছে, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে আমার কিছু করার নেই।"